সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মধ্য রমজানেও স্বস্তি নেই বাজারে

–নতুন করে দাম বেড়েছে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের

–কিছুটা দাম কমেছে চাল ও মুরগির

নিজস্ব প্রতিবেদক

রমজান মাসের অর্ধেক শেষ হয়ে গেছে। মধ্য রমজানে এসেও ভোগ্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি পাচ্ছেন না ক্রেতারা। কারণ নতুন করে আবারো দাম বাড়তির দিকে পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, বিভিন্ন রকম ফলমুলসহ আরো বেশ কিছু পণ্যের। তাছাড়া রোজার যেসব প্রয়োজনীয় পণ্য ছোলা, ডাল, চিনি, খেজুরের দাম কমেনি, এখনো বিক্রি হচ্ছে চড়া দামেই। তবে নতুন বোরো ধান উঠতে শুরু করায় চালের দাম কেজিতে ২ টাকা করে কমেছে। তাছাড়া সবজি ও মুরগির দামও কিছুটা কমেছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে ভোগ্যপণ্যের এ মূল্য পরিস্থিতি দেখা যায়।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। ৩৫ টাকায় নেমে এসেছিল পেঁয়াজ। অথচ গতকাল বিক্রি হয়েছে বাজারভেদে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। মুদি দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে বোতলজাত ১ লিটার সয়াবিনে আবারো ৫-৬ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতো দিন ১৩৯ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল সেটি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়। আবার ৫ লিটার সয়াবিনের বোতলে ৬৬০ টাকার বদলে ৬৮০ টাকা রাখা হচ্ছে। ভোজ্যতেলের দাম আবারো বৃদ্ধি সম্পর্কে দোকানদাররা বলেন, ভোজ্যতেলের সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা গত এক সপ্তাহ ধরেই বলে আসছেন আবারো দাম বাড়ানো হবে সয়াবিনের। ঠিকই তারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন, কেন বাড়ানো হয়েছে জানতেই চাইলে তারা বলছেন, বিশ^ বাজারে দাম বেড়েছে তাই বাড়ানো হয়েছে।

বোতলজাত সয়াবিনের পাশাপাশি খোলা সয়াবিনের দাম বাড়ার তথ্য মিলেছে অন্য বাজারগুলোতেও। দুদিন আগে ১৩০ থেকে ১৩২ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া খোলা সয়াবিন তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৩৬ টাকা। এর সঙ্গে বেড়েছে পাম সুপারের দাম। ১২০ থেকে ১২২ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাম সুপারের দাম বেড়ে ১২৫ থেকে ১২৭ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে নতুন আসা ফুলকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এর সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে কিছু সবজির দাম কমেছে। রোজার শুরুতে ১২০ টাকায় উঠে যাওয়া বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এই সবজিটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে রোজার শুরুতে অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়া শসার দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে। মানভেদে শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ টাকা এবং রোজার শুরুতে ছিল ৮০ টাকা।

দাম কমার তালিকায় রয়েছে- পটল, বরবটি, ঢেড়স, ঝিঙে। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। গত শুক্রবার ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটির দাম কমে ৪০ থেকে ৫০ টাকা হয়েছে। ঢেড়সের কেজিও বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গত সপ্তাহের মতো ৬০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হওয়া ঝিঙের দাম কমে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে লাউয়ের পিস আগের সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা।

বাজারে নতুন আসা কাঁকরোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। কাঁকরোলের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে কচুর লতি। এক কেজি কচুর লতি কিনতে গুনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।

এদিকে ব্রয়লার ও পাকিস্তানি কক বা সোনালী মুরগির দামও কিছুটা কমেছে। বাজারে ব্রয়লার ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি কক বা সোনালী মুরগি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা।

নতুন বোরো ধান ওঠায় বাজারে সব প্রকার চালের দাম কেজি প্রতি কমেছে ২ টাকা করে। প্রতি কেজি বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়, মিনিকেট ৬৩ থেকে ৬৪ টাকায়, নাজির ৬৫ থেকে ৬৮ টাকায়, মোটা চাল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়, পোলাওয়ের চাল ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা ভোজ্যতেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৩৯ টাকায়।

লাল ডিম এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। হাঁসের ডিমের দাম কমে ডজন এখন ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। বাজারে অপরিবর্তিত আছে গরু ও খাসির মাংস, মসলাসহ অন্যান্য পণ্যের দাম। বাজারে প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়, বকরির মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়, গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকায়।

বাজারে সব ধরণের মাছের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, মাগুর মাছ ৬০০ টাকা, শিং মাছ (আকারভেদে) ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মৃগেল ১১০ থেকে ১৫০ টাকা, পাঙ্গাস ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, ইলিশ প্রতি কেজি (আকারভেদে) ৮৫০ থেকে ১০০০ টাকা, চিংড়ি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, কাতল ১৭০ থেকে ২৮০ টাকা, ফোলি মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, পোয়া মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, পাবদা মাছ ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, টেংরা মাছ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, টাটকিনি মাছ ১০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০ টাকা, সিলভার কার্প ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, কৈ দেশি মাছ ১৫০ থেকে ৭০০ টাকা, কাঁচকি ও মলা ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, আইড় মাছ ৫০০, রিঠা মাছ ২২০ টাকা ও কোরাল ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, গুড়া বেলে ১২০ টাকা, মাঝারি আকারের রূপচাঁদা মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *