সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ

  • ক্রীড়া প্রতিবেদক

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ। ৪ রানের ব্যবধানে সফরকারীদের হারিয়েছে টাইগাররা।  শুরুতে ব্যাট করে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪২ রানের লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভার ব্যাট করে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩৭ রানের বেশি করতে পারেনি সফরকারীরা।

শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর ২০২১) মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচের শেষদিকে বেশ রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে। শেষ ওভারে নিউজিল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২০ রান। বোলিংয়ে ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান।

মিরপুরের মন্থর উইকেটে মুস্তাফিজ বেশ কার্যকর। তবুও আজ ছন্দ হারালেন কাটার মাস্টার। করলে নো বল। ওই বলও আবার হলো সীমানা ছাড়া। শেষ ২ বলে সফরকারীদের দরকার ৮ রান। কিন্তু শেষ অবধি মুস্তাফিজ এই দুই বলে ৪ রানের বেশি করতে দেননি।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও পাঁচ ম্যাচের সিরিজ বাংলাদেশের। সিরিজ এখনো শেষ হয়নি, মাত্র দুটি ম্যাচ হয়েছে। যেখানে প্রথমটিতে ৭ উইকেটে হারানোর পর আজ দ্বিতীয় ম্যাচে ৪ রানের জয় টাইগারদের।

নিউল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ঘোষণা দেয়, এই ম্যাচটি ক্যান্সার যোদ্ধাদের উৎসর্গ করে খেলতে নামবেন সাকিব-রিয়াদরা। বাংলাদেশ ক্রিকেটে অবশ্য এমন ব্যতিক্রম ভাবনা সহসা দেখা যায় না। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে একবার রাজশাহীর ফ্র্যাঞ্চাইজি তাদের খেলোয়াড়দের পরিবর্তে জার্সিতে তাদের মায়েদের নাম লিখে খেলতে নেমেছিল।

নিউজল্যান্ডের বিপক্ষে আগের ১০ টি-টোয়েন্টিতে যেখানে কোনও জয় ছিল না বাংলাদেশের, সেখানে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৬০ রানে গুঁটিয়ে দিয়ে ৭ উইকেটে জয়ের পর আজ দ্বিতীয় ম্যাচে ৪ রানের জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা। এতে টানা দ্বিতীয় জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ দল। এবার অপেক্ষা সিরিজ জয়ের।

এদিন আগে ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে ১৪১ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারেনি ব্ল্যাকক্যাপসারা। অধিনায়ক টম লাথাম অবশ্য একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলে ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নেন, তবে বাকিদের ব্যর্থতায় জয়ের খুব কাছে গিয়েও নিউজিল্যান্ডের ইনিংস থামে ১৩৭ রানে। এতে ৪ রানের জয় পায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

টার্গেট টপকাতে নেমে ভালো শুরুর বার্তা দেন দুই ওপেনার রাচিন রাবীন্দ্র ও টম ব্লান্ডেল। উদ্বোধনী জুটিতে ১৬ রান যোগ করে সাকিবের বলে আউট হন রাচিন। পরের ওভারে সফরকারী শিবিরে আঘাত হানেন শেখ মেহেদী হাসান। ফেরান ৬ রানে থাকা ব্লান্ডেলকে। এরপর অধিনায়ক টম লাথাম ও উইল ইয়াংয়ের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে নিউজিল্যান্ড। তৃতীয় উইকেটে তাদের পার্টনারশিপ থেকে আসে ৪৩ রান।

ইয়াং ২০ রান করে সাকিবের বলে আউট হলে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম আর হ্যানরি নিকোলসও সুবিধা করে পারেননি। সতীর্থদের আসা-যাওয়া ক্রিজে দাঁড়িয়ে দেখেন লাথাম। একপ্রান্ত আগলে রেখে অবশ্য ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নেন তিনি। সাকিব-মেহেদীদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শেষ ২ ওভারে জয়ের জন্য কিউইদের প্রয়োজন পড়ে ২৮ রান। পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন দেন ৮ রান।

৫ উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ডের ইনিংস থামে ১৩৭ রানে। এতে ৪ রানের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ দল। লাথাম অপরাজিত থাকেন ৪৯ বলে ৬৫ রানে। যেখানে ৬টি চারের সঙ্গে ১টি ছক্কা মারেন তিনি।

এর আগে ইনিংসের গোড়া পত্তন করতে নেমে কোল ম্যাককঞ্চির করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই খালি হাতে ফিরতে পারতেন লিটন। স্কয়ার লেগে তার সহজ ক্যাচ ছাড়েন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। জীবন পেয়ে এজাজ প্যাটেলের পরের ওভারেই টানা দুইটি চার মারে লিটন। চতুর্থ ওভারে হামিশ বেনেটকে দিয়ে পেস আক্রমণ আনেন কিউই অধিনায়ক টম লাথাম। সময়ের সাথে সাবলীল ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে ৩৬ রান তুলে ফেলে নাঈম-লিটন জুটি।

এ ম্যাচের আগে এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ দল নিজেদের ওপেনিং পার্টনারশিপে পঞ্চাশ রান পার করতে পেরেছিল জিম্বাবুয়ে সফরের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে। এরপর মাঝে চলে গেছে ৮ ম্যাচ। এমনকি পাওয়ার প্লের ৬ ওভারও শেষ করে আসতে পারেনি কোনও ওপেনিং জুটি। কিউইদের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে লিটন আর নাঈম সে আক্ষেপে খানিক প্রলেপ দিয়ে উদ্বোধনি জুটিতে জমা করেন ৫৯ রান।

ইনিংসের ১০তম ওভারের তৃতীয় বলে নিউজিল্যান্ডকে প্রথম সাফল্য এনে দেন রাচিন রবীন্দ্র। বাঁহাতি এই স্পিনারের বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন লিটন। ফিরেছেন ২৯ বলে ৩ চার ১ ছক্কায় ৩৩ রান করে। ক্রিজে এসে প্রথম বলেই স্টাম্পিং মুশফিকুর রহিম। হ্যাটট্রিক সম্ভাবনা জাগে রবীন্দ্রের। বাংলাদেশকে অস্বস্তিতে পড়তে দেননি সাকিব আল হাসান। তবে ২ চারে ৭ বলে ১২ রান করে ফিরতে হয় তাকেও। ম্যাককঞ্চির বলে বেন সিয়ার্সকে ক্যাচ দেন তিনি।

৭২ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন নাঈম-মাহমুদউল্লাহ। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৩৪ রান জমা করেন দুজন। নাঈম ব্যক্তিগত ফিফটির দিকে ছুটছিলেন বটে, তবে ৩৯ রানে তাকে নিজের তৃতীয় শিকার বানিয়ে থামান রাচিন। ক্রিজে এসে বেশিক্ষণ টিকেননি আফিফ হোসেনও (৩ বলে ৩)। এরপর রানের গতি মন্থর হলেও শেষ দুই ওভারে মাহমুদউল্লাহও নুরুল হাসান সোহান ২৪ রান তুলে ১৪১ রানের দলীয় সংগ্রহ দাঁড় করান।

সোহান ৯ বলে ১৩ রান করে ইনিংসের শেষ বলে আউট হলেও মাহমুদউল্লাহ ৩২ বলে ৫ চারে ৩৭ রানে  অপরাজিত থাকেন। কিউইদের হয়ে রাচিন রবীন্দ্র নেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট।

সম্পর্কিত পোস্ট