- নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সম্প্রীতি বাংলাদেশে নামক সংগঠনের উদ্যোগে সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশে একাত্মতা জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসম্প্রদায়িক ৮০টি সংগঠন।
সোমবার (২৫ অক্টোবর ২০২১) দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশে সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্থদের বাড়ি-ঘর সংস্কারসহ সাত দফা দাবি পেশ করা হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নাট্যকার ও সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দোপাধ্যায়। এসময় তিনি সমাবেশের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি পেশ করেন।
দাবিগুলো হলো :
১. সাম্প্রতিক ঘটনার সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা
২. অতীতের ঘটনার দ্রুত বিচার সম্পন্ন করা
৩. সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্টের ঘটনা আর যেন না ঘটে সেজন্য প্রশাসনকে আরও বেশি তৎপর হওয়া
৪. সাম্প্রতিক ঘটনার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর উপাসনালয় দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা করা
৫. বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতীয়তাবাদসহ শিক্ষা ব্যবস্থায় মানবিক মূল্যবোধ ও সহনশীলতার বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা
৬. আবহমান বাংলার সংস্কৃতি চর্চায় তরুণ ও যুব সমাজকে অধিকতর সম্পৃক্ত করতে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া
৭. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও উস্কানি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে সম্প্রীতি বিনষ্টকারী যেকোনো অপশক্তির বিরুদ্ধে মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, বঙ্গবন্ধুর চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে একনিষ্ঠ থাকে আজকের এই সম্প্রীতি সমাবেশ তারই প্রমাণ।
সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যখন যেখানে মাথা ছাড়া দিয়ে ওঠবে সেখানেই তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানানো, প্রতিরোধ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। সাম্প্রদায়িকতা রুখতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এসেও আমাদেরকে সম্প্রীতির বাংলাদেশের জন্য রাজাকার, আল বদর, তালেবান বিরোধী সভা সমাবেশ করতে হচ্ছে এটি আমাদের জন্য দুঃখজনক এবং লজ্জাজনক বটে।
চেতনা একাত্তরের সভাপতি আসিফ মনির তন্ময় বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ঘটনা আর যেন না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো বেশি তৎপর হতে হবে। এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, এটি সাম্প্রতিককালে অনেকবার আলোচিত হয়েছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকেও সেরকমটি বলা হচ্ছে। এই ঘটনার সাথে জড়িতদের দুই একজনকে গ্রেফতার করা হলেও মূল হোতাদের সরাসরি চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস বলেন, যখন আমার জাতির পিতার আদর্শের ওপর আঘাত আসে, যখন এই মূলনীতি অসাম্প্রদায়িকতার আঘাত আসে, ধর্ম নিরপেক্ষতার ওপর আঘাত আসে, তখন আমরা বসে থাকব না।
আমরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, এইদেশকে যার আফগানিস্তান, পাকিস্তান বা ইরাকে পরিণত করতে চায় তাদেরকে আমরা রাজপথে মোকাবেলা করব। সংখ্যালঘু শব্দটি শুনলেও আমার ঘৃণা আসে, এই ধরনের কোনো শব্দ থাকতে পারে না। সবার আগে আমার পরিচয় আমি বাঙালি, আমি হিন্দু না মুসলমান, বৌদ্ধ না খ্রিস্টান তা আমার উপাসনালয়ের পরিচয়, আমার রাজনৈতিক পরিচয় নয়।
অধ্যাপক মাহবুব আল মাহতাব স্বপ্নীলের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান আবুল আজাদ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ঢাকা মহা নগর সভাপতি চিত্ত রঞ্জন দাস, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ভাষা সৈনিক মনোরঞ্জন ঘোষাল, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মনিরুজ্জামান নান্টুসহ প্রমুখ।
সমাবেশর সাথে একাত্মতা পোষণ করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, প্রজন্ম একাত্তর, উদীচী, মঠ ও মিশন বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকত বিরোধী দক্ষিণ এশীয় সম্মীলন, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটসহ ৮০টিরও অধিক প্রগতিশীল সংগঠন।