সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ-মালদ্বীপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চুক্তি

  • দেশকাল ২৪ ডটকম

বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে আজ দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দ্বৈত কর পরিহার এবং যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরিত এবং একটি চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর ২০২১) সকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সোলিহ’র মধ্যে দ্বি-পক্ষীয় আলোচনা শেষে উভয় নেতার উপস্থিতিতে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও মালদ্বীপের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আহমেদ নাসিম দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের ওপর সমঝোতা স্মারকে সই করেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও মালদ্বীপের যুব, ক্রীড়া ও কমিউনিটি ক্ষমতায়নমন্ত্রী আহমেদ মাহলুফ বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে যুব ও ক্রীড়া উন্নয়নে সহযোগিতার ওপর নিজ নিজ দেশের পক্ষে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেন।

এছাড়াও, বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ও কমিশনার-জেনারেল অব ট্যাক্সসেশন অব মালদ্বীপ ইনল্যান্ড রেভেন্যু অথোরিটি (এমআইআরএ) ফাতুহুল্লাহ জামিল মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের মধ্যে আয়করের ক্ষেত্রে দ্বৈত কর বাতিল এবং কর এড়ানো রোধে নিজ নিজ দেশের পক্ষে একটি চুক্তিতে সই করেন।

এছাড়াও, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ওপর নিজ নিজ দেশের পক্ষে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেন। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও মালদ্বীপের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আহমেদ নাসিম নবায়নকৃত সমঝোতা স্মারকে সই করেন।

অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে মালদ্বীপকে ১৩টি সামরিক যান উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পক্ষে চিফ অব আর্মি স্টাফ জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ মালদ্বীপের চিফ অব ডিফেন্স ফোর্স মেজর জেনারেল আব্দুল্লাহ্ শামালের কাছে সামরিক নৌযানের চাবি প্রতিকী হস্তান্তর করেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী মালেতে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে পৌঁছালে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সোলিহ তাঁকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেন। এ সময় শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার প্রদান ও গান স্যালুট দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী উভয় দেশের ‘লাইন অব প্রেজেন্টেশন’ ও পরিদর্শন করেন।

শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে রক্ষিত দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন এবং সেখানে ফটো সেশনে অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বুধবার বিকেলে (২২ ডিসেম্বর) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি বিশেষ ফ্লাইটে প্রথমবারের মতো ছয় দিনের দ্বিপাক্ষিক সফরে মালদ্বীপের রাজধানী মালে পৌঁছেন।

স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পর বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট যৌথ ব্রিফিংকালে পৃথক বক্তব্য প্রদান করেন। ব্রিফিংকালে দুই নেতা বলেন, দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও যোগাযোগ বৃদ্ধিতে তাদের মধ্যে ফলপ্রুসু দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে। যৌথ ব্রিফিংকালে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও যোগাযোগ বৃদ্ধিতে প্রেসিডেন্ট সোলিহ’র সাথে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা- বিশেষত স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মানব সম্পদ উন্নয়ণ, যুব ও ক্রীড়া, মৎস্য চাষ ও কৃষি ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদারে তারা সম্মত হয়েছেন।

তিনি বলেন, আলোচনাকালে দুই নেতা জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুুচ্যূত রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে একসাথে কাজ করবেন বলে সম্মত হয়েছেন।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, প্রেসিডেন্ট সোলিহ’র সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠককালে তারা পারস্পারিক বিনিয়োগের পথ সুগম করতে দু’দেশের মধ্যে প্রিফারেনশিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) এবং একটি দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তির প্রয়োজনীয়তার ওপর পুনরায় গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, ‘সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমরা এখনো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারিনি।’

এই বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের জানাতে পেরে খুব খুশি যে- আমাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সার্বিক ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। আমাদের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তের ওপর পর্যালোচনা করেই আমরা অগ্রসর হয়েছি এবং একটি সন্তোষজনক ফলফল পেয়েছি।’ তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলাসহ বহুমুখী ফোরামে সহযোগিতার ব্যাপারেও তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

যৌথ ব্রিফিংকালে মালদ্বিপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সোলিহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তার ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আমাদের যোগাযোগ জোরদারের বিষয়টি তুলে ধরেছি।’

অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমার মধ্যে এবার আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে এবং এ সময় আমরা গত মার্চ মাসে আমাদের মধ্যেকার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছি।’

লদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বলেন, দ্বিপাক্ষিক ইস্যু ছাড়াও বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী ও তিনি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে পারস্পারিক সহযোগিতার ব্যাপারে আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, ‘সার্ক ও ইন্ডিয়ান ওশন রিম অ্যাসোসিয়েশনের মতো অন্যান্য প্লাটফরমগুলোতে প্রধানমন্ত্রী ও আমি আঞ্চলিক সমৃদ্ধি, স্থিতিশীলতা ও শান্তির লক্ষ্যে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থাকে অবশ্যই মোকাবিলায় পরস্পরকে সহযোগিতা করব বলে আশ্বস্ত করেছি।’

সূত্র: বাসস

সম্পর্কিত পোস্ট