সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ ব্যাহত করতে পারবেনা: শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে আর কেউ ব্যাহত করতে পারবেনা। বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে আর কেউ ছিনিবিনি খেলতে পারবে না। এবারে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশকে শিক্ষা দীক্ষায় স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। তিনি নির্বাচন কমিশন ও গণমাধ্যম কর্মীদেরআন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

বুধবার (১০ জানুয়ারি) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ও আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় উপলক্ষ্যে আয়োজিত জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আমি মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। আমার অবাক লাগে যখন জনগণের ভোট কারচুপি করে, তখন কেউ কথা বলে না। যখন মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। তখন কেউ কেউ কথা বলে।

তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র কিছু সুসংহত করেছি। বাংলাদেশ সব দিক থেকে এগিয়ে গেছে। বিশ্ববাসী বলছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। কিন্তু এদেশের জনগণ সকল বাধা বিঘ্ন উপেক্ষা করে, হরতাল অবরোধ, বাস করে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করা, পুলিশকে পিটিয়ে মেরে হত্যা, ট্রেনের লাইন কেটে দেওয়া, মানুষ যাতে নির্বাচনে ভোট না দেয় লিফলেট বিলি করা।

নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা কিছু বলিনি। কিন্তু দেশের মানুষ নির্বাচনকে গ্রহণ করে ভোট দিয়েছে। এজন্য দেশের মানুষকে অভিনন্দন জানাই তারা তো ভাবে ভোট দিয়েছে। এমনকি ১৩০ বছরের একজন বুড়িমা তিনি শেখ হাসিনাকে ভোট দেবো বলে ভোট দিতে এসেছে। আমি দেশের জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮১ সালের যখন দেশে ফিরে আসি। তখন বলেছিলাম আমি দেশের জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করলাম। বঙ্গবন্ধু এদেশে স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন। লাখো মানুষ জীবন দিয়েছে। আমি দেশের মানুষের মধ্যে খুঁজে পেয়েছি আমার বাবা মায়ের স্নেহ। আমার একটাই লক্ষ্য প্রত্যেকটা মানুষের জীবন যেন উন্নত করতে পারি।

ওয়ান ইলেভেনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমাকে গ্রেফতার করে। তারপর তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাধ্য হয়ে নির্বাচন দেন। অনেকের ধারণা ছিল ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমান সমান ভোট পাবে। কিন্তু বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ২৯ টি সিট। সেদিন বিএনপিকে এদেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছিল এটাই প্রমাণ করে।

২০০১ নির্বাচনে আমাকে হারানো হয়েছিল। ২০০৯ সালের পর নির্বাচিত হয়ে ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র পরিচালনা করেছি। জাতির পিতার আমলে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। কিন্তু ৭৫ এর পর সেটি আর হয়নি। কিন্তু ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয় উদযাপনের সময় আবার উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি।

তিনি বলেন, আজকে শপথ হয়েছে। পার্লামেন্ট বোর্ড আমাকে নেতা হিসেবে নির্বাচিত করেছে। এজন্য পার্লামেন্ট বোর্ডের সদস্যদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাত মার্চ এখানেই ভাষণ দিয়েছিলেন। বাঙালি জাতিকে কেউ দাবায় রাখতে পারবে না। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাপিয়ে পড়ে। সেই সময় বঙ্গবন্ধু বাঙালি কে রুখে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ডাকে বাংলার জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছিল।

পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির অর্ডার হয়েছিল। তিনি ৭ জানুয়ারি মুক্তি পান। চলে যান লন্ডনে। দশ জানুয়ারি দেশে প্রত্যাবর্তন করে চলে আসেন এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। তিনি একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ কিভাবে চলবে তার সকল নির্দেশনা দিয়েছিলেন। দীর্ঘ ৯ মাস তিনি কারাগারে বন্দী ছিলেন। শীতের সময় প্রচন্ড শীত গরমের সময় প্রচন্ড গরম ছিল। কোন পত্রিকা কাগজ কিছুই তার কাছে ছিল না। সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে লন্ডন থেকে বাংলাদেশের মাটিতে এসে ১০ জানুয়ারি তিনি এখানে এসে ভাষণ দিয়েছিলেন।

দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটা বাদ দিয়ে চিন্তা ভাবনা সেটাই তিনি ভাষণে তুলে ধরেছিলেন। তিনি সময় পেলেছিলেন মাত্র তিন বছর ৭ মাস ৩ দিন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গ্রামে প্রোগ্রাম জালিয়ে ছারখার করে দিয়েছিল। একটা বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলতে তা করেছিলেন তিনি। সমস্ত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবার সবাইকে স্বাস্থ্য সেবা দিয়েছিলেন। একটা বিধ্বস্ত গড়ে তুলে  মাথাপিছু আয় ৭৭৭ ডলারে উন্নীত করেছিলেন।

কিন্তু ৭৫ এর ১৫ ই আগস্ট এদেশের রাষ্ট্রপতিকেই হত্যা করা হয়নি। হত্যাকান্ড করেছিল আমার পরিবারকে। ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছিল। সাত মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। জনগণের অধিকার নিয়ে ছিনিবিনি খেলা হয়েছিল। দেশের মানুষ ছিল ক্ষুধার্ত। তাদের খাবার ছিল না। এদেশের মানুষ শিক্ষা আলো থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। মানুষের সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমি ফিরে আসি এমন একটি দেশে। আমার বাবা মায়ের হত্যাকারীদের বিচার করা যাবে না এমন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। যুদ্ধাপরাধী বিচার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুরু করেছিলেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান তাদের ছেড়ে দিয়ে মন্ত্রী বানায়। সেই সময় আমি দেশে ফিরে আসি।

এময় আরও বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আব্দুর রহমান, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহাবুব উল আলম হানিফ, ডা. দিপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগন।

সম্পর্কিত পোস্ট