সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সরকার সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ এখন অতটা খারাপ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ডলারের সংকট এখন ঠিক সেরকম নেই, রফতানি আয়ও খুব একটা কমেনি। দেশের অবস্থা অতোটা খারাপ নয়। সরকার সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক রয়েছে।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা জানান। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় পড়ে গেলাম। ফলে আমাদের কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমাদের কিছু খরচের ব্যাপারে মিতব্যয়ী হতে হয়েছে, কিছুটা সংকুচিত করতে হয়েছে। ডলারের সংকট যথেষ্ট ছিল, এখন ঠিক সেরকম সংকট নেই।
আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে আমরা মনিটরিং বাড়িয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে যতটা প্রয়োজন নয়, তার চেয়ে বেশি দিয়েও অনেকেই এলসি খুলে, কিন্তু ওই টাকাটা ফেরত আসে না। এ কারণে সরকার পণ্য কেনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ব্লুমবার্গের মূল্য তালিকা দেখে, তা মনিটর করে এলসি খুলতে দেয়। আগে যেভাবে যখন-তখন এলসি খোলা হতো। এখন ইচ্ছেমতো হচ্ছে না, সেটাতে নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে।
রফতানি আয় খুব একটা কমেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব দেশে আমরা রফতানি করি, এমনকি যেগুলো খুব ধনী দেশ, তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, বাজার সংকুচিত হয়েছে, সেখানে অর্ডার কমেছে। অর্থনৈতিকভাবে তারা খুব চাপে আছে, তাদের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তারই ফলে হয়তো কিছুটা কমেছে।
তিনি বলেন, রফতানি আয় বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিকল্প বাজার খুঁজে বেড়ানো, রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণে ব্যবস্থা নিয়েছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কৃষক যথাযথ উৎপাদিত পণ্যের মূল্য না পেলে সমস্যা হবে। মূল্য বাড়লে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ কষ্ট পাবে।
নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতায় ১৩ জন নিহত
আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আবদুল্লাহের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্থ করতে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসররা গত বছর ২৮ অক্টোবর থেকে সহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশে ৬শতাধিক যানবাহনে ভাঙচুর করেছে। এরমধ্যে ১৮৪টি যাত্রিবাহী বাস, ৪৮টি ট্রাক, ২৮টি কাভার্ড ভ্যান, মালবাহী লরি ও কনটেইনার, ৩টি সিএনজি, ৪টি প্রাইভেট কার এবং ১১টি পিক আপ ভ্যান রয়েছে। এছাড়া সর্বমোট ৩২৮টি যানবাহন ও প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরমধ্যে একটি বৌদ্ধ মন্দির (রাম-কক্সবাজাব, ৫টি ট্রেন, একটি নৌকা, ১৫টি মোটর সাইকেল, ৩টি লেগুনা, একটি ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস (মধ্যরামপুরা, ফেনী) এবং একটি অটোরিকশা রয়েছে।
তিনি আরো জানান, ওই সময়ে নাশকতার ঘটনার ১৩ জন নিহত হয়েছে। জানান, অগ্নি-সন্ত্রাস, নাশকতা, অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড প্রভৃতি অপরাধে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য দেশে দক্ষ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, বিচার ব্যবস্থা ও প্রচলিত আইন রয়েছে। হরতাল ও অবরোধের নামে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক বিভিন্ন আইনী কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আহত হরতাল-অবরোধে ড্রাইভার, হেলপার, পুলিশ, বিজিবি, শ্রমিক, মুক্তিযোদ্ধাসহ বহু লোক নিহত, আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করিয়াছে এবং বিএনপি ক্যাডাররা অসংখ্য যানবাহন জ্বালিয়ে দিয়াছে। হরতাল অবরোধের নামে নাশকতার ঘটনায় সারাদেশে ১৩জন নিহত হয়েছে। যার মধ্যে ট্রেনে নাশকতার ঘটনায় নিহত হয়েছে ৯ জন, বিজিবির ২ জন আহত এবং ১টি রিকুইজিশনকৃত যানবাহনের ক্ষতি সাধন হয়। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিভিন্ন জেলায় ৪৫ জন সদস্য আহত হয়েছে। বিআরটিসি বাস ডিপোর বাস রক্ষা করতে গিয়ে একজন আনসার সদস্য ইট পাটকেলের আঘাতে আহত হয়। এদের মধ্যে দুইজন আনসার সদস্য হোসেন আলী ও সুমন আলী বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়। তাদেরকে বাহিনীর পক্ষ থেকে চিকিৎসা সেবা ও আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়েছে।
জীবনচিত্র পাল্টে দিয়েছে পদ্মা সেতু 
পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থসামাজিক জীবন চিত্র পাল্টে দিয়ে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের লিখিত উত্তরে তিনি জানান, দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি জেলার সাথে ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের পর থেকে সেতু পারাপারকারী যানবাহন হতে চলতি বছর ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট এক হাজার ২৭০ কোটি ৮১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৫০ টাকা টোল আদায় হয়েছে। দৈনিক গড় আয় প্রায় ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতির গর্ব ও সক্ষমতার প্রতীক ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা বহুমুখী সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় পরদিন ২৬ জুন। উদ্বোধনের পর থেকে সেতু পারাপারকারী যানবাহন হতে চলতি বছর ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট এক হাজার ২৭০ কোটি ৮১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৫০ টাকা টোল আদায় হয়েছে।
তিনি আরো জানান, কর্মসংস্থান হয়েছে শ্রম শক্তির প্রায় এক দশমিক ৪ শতাংশ। দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিবছর এক দশমিক ১ ও সারা দেশে ০ দশমিক ৮৪ শতাংশ দারিদ্র্য হ্রাস হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ ও সামগ্রিকভাবে এক দশমিক ২৩ শতাংশ। যোগাযোগের জন্য ট্রান্স এশিয়ান রেল ও সড়ক এ সেতুর মাধ্যমেই যুক্ত হবে। ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের মাধ্যমে বাণিজ্য ও শিল্পায়ন ও পর্যটন ত্বরান্বিত হবে বলেও উল্লেখ করেন সরকার প্রধান।
সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে ৭৩ দেশ-সংস্থা
সরকারি দলের সংসদ সদস্য আলী আজমের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ায় গত ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪৮টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। এছাড়া ২৫টি আন্তর্জাতিক সংস্থা, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বের ৪১টি দেশ থেকে ১২৬ জন পর্যবেক্ষক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশে আসেন। সরকারিভাবে ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ৪৫ জন এবং স্বাধীনভাবে ৭৯ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক এ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশ নেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশের ১৮ জন নির্বাচন কমিশনার ও তাদের প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত ৮৪টি সংস্থার ২০ হাজার ৭৭৩ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে প্রধান মন্ত্রী বলেন, সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্র ও জনমানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ অঙ্গীকারাবদ্ধ। পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ন্যায় বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা ও আইনের মাধ্যামে একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশনে পরিণত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে সব প্রশাসনিক, আর্থিক, আইনি, রেগুলেটরি ও লেজিসলেটিভ এবং নীতি প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণ সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের এই কষ্টসাধ্য কিন্তু অঙ্গিকারদীপ্ত স্বপ্নযাত্রায় বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের অবিচল আস্থা ও অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। কোনো অপশক্তিই বাংলাদেশের এ গণতান্ত্রিক ধারার উন্নয়ন অভিযাত্রার পথকে রুদ্ধ করতে পারবেনা। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে আপামর জনসাধারণকে সাথে নিয়ে আমরা আমাদের পবিত্র সংবিধান, গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মর্যাদাকে সমুন্নত রেখেছি, ভবিষ্যতেও রাখবো।

সম্পর্কিত পোস্ট