সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

দক্ষ চিকিৎসক তৈরি করার লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, দক্ষ, ভাল ও সুন্দর চিকিৎসক যেন তৈরি করতে পারি সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। আমি কোয়ালিটি চাই, কোয়ান্টিটি চাই না।
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) শাহবাগের বারডেম হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস’ ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ আলোচনা সভায় আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, আমি স্পষ্ট করতে বলতে চাই, চিকিৎসকদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব আমার, কিন্তু রোগীর ভালো সেবা দেবার দায়িত্ব নিতে হবে। আমার যেমন চিকিৎসকদের প্রতি দায়িত্ব আছে, তেমনি রোগীদের প্রতিও সমান দায়িত্ব আছে। এই দুই দায়িত্বই আমি নিচ্ছি তবে, হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা থেকে কোন রোগী যেন বঞ্চিত না হয় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, সমিতির সহসভাপতি আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, বারডেমের মহাপরিচালক অধ্যাপক এমকেআই কাইয়ুম চৌধুরী।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বারডেম একাডেমির পরিচালক অধ্যাপক মো. ফারুক পাঠান। অনুষ্ঠানে নির্বাচিত আদর্শ ডায়াবেটিক রোগীদের প্রাইজবন্ড ছাড়াও অভিনন্দনপত্র ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
এছাড়াও ‘ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস’ উপলক্ষে ‘কান্তি’র বিশেষ প্রকাশনা, সচেতনতামূলক পোস্টার ও লিফলেট প্রকাশ ও বিতরণ, বিনামূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা এবং স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিসহ নানা পালন করা হয়। সমিতির অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ করেই দেখা যাচ্ছে- অনেক মেডিকেল কলেজ খোলা হচ্ছে কিন্তু কোন শিক্ষক নাই। সেটার পক্ষে আমি না। আমি মেডিকেল কলেজ সেখানেই খুলবো যেখানে ভাল শিক্ষক থাকবে। আর সেটা করতে গেলে অনেক চিকিৎসকের প্রয়োজন আছে। কিন্তু আমাদের চাহিদায় তুলনায় তা অপ্রতুল। বিশেষ করে বেসিক সাইন্সের কোন শিক্ষকের সংকট রয়েছে। আর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এইসব ঘাটতি পূরণ করতে চাই।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আমরা যদি বেসিক সাইন্স পড়াতে না পারি তাহলে ভাল চিকিৎসক পাওয়া যাবে না। এটা চিকিৎসকরা সবাই নিশ্চয় স্বীকার করবেন। আমাদের দেশে স্বাস্থ্যখাতে নানা সমস্যা রয়েছে। তারপরও বিভিন্ন সময়ে নানা দুর্ঘটনা ঘটে। আর এই সব ঘটনায় আমাকে ভীষণভাবে পীড়া দেয়। দুই/একটা ঘটনা নিয়ে সমস্ত চিকিৎসক সমাজের উপর এক ধরনের অপবাদ আসে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি না দেশের সব চিকিৎসক খারাপ কিংবা অবহেলা করে। আমাদের অনেক ভাল ভাল জ্ঞানী গুণি এবং সৎ চিকিৎসক রয়েছে। আর যে সব ঘটনা নিয়ে আমরা বিচলিত হয়ে যাই। আমরা চেষ্টা করছি সেই সব ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
ওষুধের দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ওষুধের দাম যে বেশি তা আমি জানতাম না। আমি গতকালই মন্ত্রণালয়ে ঔষধের মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভায় জেনেছি। সভায় আমরা সিন্ধান্ত নিয়েছি কি কি ওষুধের দাম বাড়বে। যে সব অ্যাসেনশিয়াল ওষুধ রয়েছে তা যেন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে সেই চেষ্টা করে যাবো।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীব্যাপী ডায়াবেটিস দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর ৭ মিলিয়ন করে নতুন রোগী তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশেও ডায়াবেটিস আক্রান্তের হার দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। বাংলাদেশে এখন প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ ডায়াবেটিস রোগী আছে। এর বাইরে, বর্তমানে দেশে ৫০ ভাগ মানুষ জানেই না তাদের ডায়াবেটিস হয়েছে।
তিনি বলেন, ইদানিং গ্রামের মানুষদেরও ডায়াবেটিস হচ্ছে যা আমাদের ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মুহুর্তে সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে, শারীরিক পরিশ্রম বাড়াতে হবে, স্বাস্থ্যকর জীবন-যাপনের অভ্যাস করতে হবে।
এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডা. শহিদ মিলন অডিটোরিয়াম হলে নর্থ আমেরিকা মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের যৌথ আয়োজনে ডোনেশন অব মডার্ণ হেলথ কেয়ার ইকুইপমেন্ট এন্ড হ্যান্ডস অন ট্রেইনিং’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাত দিয়ে ৫ বেডের বার্ন ইউনিট শুরু করেছিলাম, তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত দিয়ে ৫০০ বেডে উন্নীত করেছি। চেষ্টা থাকলে সবই করা সম্ভব। এভাবে, সবার সহোযোগিতা পেলে আমরা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার মান অবশ্যই উন্নত করতে পারবো।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাকা মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা যে পরিমাণ পরিশ্রম করেন তাদেরকে আমি মনে করি নোবেল দেওয়া উচিত। হাজার হাজার রোগীকে দিনরাত অক্লান্ত সেবা দিয়ে এই চিকিৎসকরা সুস্থ করে তোলেন। চিকিৎসকদেরকে এই কৃতিত্ব অবশ্যই দিতে হবে।
অনুষ্ঠানের নর্থ আমেরিকা মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ব্যক্তি পর্যায়ে চিকিৎসা সামগ্রী প্রদান করা হয়।

সম্পর্কিত পোস্ট