সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বেতন ভাতা বৃদ্ধিসহ চার দফা দাবিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি

বেতন ভাতা বৃদ্ধিসহ চার দফা দাবিতে দেশজুড়ে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করেছেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। কর্মবিরতির কারণে চরম ভোগান্তিসহ তাৎক্ষণিক ও নিয়মিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। বহির্বিভাগে ও ওয়ার্ডে হাজারো রোগীকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। একইসঙ্গে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (২৫ মার্চ) সরেজমিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি সরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, জরুরী বিভাগ, বহির্বিভাগ, এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতার তিনগুণ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেখানে প্রতি রুমে ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ ৮-১০ জন চিকিৎসক ডিউটি পালন করার কথা সেখানে দেখা গেছে ৩/৪ জনকে। আবার কিছু ওয়ার্ডে দুই একজন চিকিৎসক দেখা গেছে। ফলে রোগীকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা মেডিকেলের বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাঙ্খিত চিকিৎসক কম থাকায় রোগী ও স্বজনদের রয়েছে সীমাহীন ভোগান্তিতে দেখা গেছে। জরুরী বিভাগে একজন চিকিৎসককে দ্বায়িত্ব পালন করতে গেছে। হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ড ও শিশু ওয়ার্ডের প্রতিটি রুমের সামনের বারান্দায় রোগী ও স্বজনদের কারণে তিলধারণের ঠাঁই নেই। মাত্রাতিরিক্ত রোগীর চাপের কারণে তাদের ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা।
শিশু ওয়ার্ডের ২০৮ নাম্বার রুমে গিয়ে দেখা যায়, টিকেট হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন অন্তত ৪০ জন রোগী। যাদের বেশির ভাগেই ঠান্ডা, সর্দি-জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এসেছেন। তাদের একজন পারুল বেগম। তিনি তার দেড় বছরের ছেলে নিয়ে এসেছেন। পারুল বেগম সময়ের আলোকে বলেন, আমার বাচ্চা দুইদিন ধরে সর্দি-জ্বর সমস্যায় ভুগছে। কিছুতেই জ্বর কমছে না। এক ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। এখনো দেখাতে পারি পারছি না। বাচ্চা কান্নাকাটি করছে। কখন দেখাবো আর কখন বাড়ি যাবো। ২০৯ নাম্বার রুমেও একই দৃশ্য দেখা যায়।
এই রুমে কর্তব্যরত এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কর্মবিরতির কারণে আমাদের উপর বেশ চাপ হচ্ছে। দশজনের কাজ একজনকে করতে হচ্ছে। তবে সবাইকে সেবা দেওয়া হচ্ছে কিন্তু কিছুটা ধীরগতি হচ্ছে। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে সেবা ব্যাহত ও রোগীদের ভোগান্তির ব্যাপারে ঢামেক হাসপাতালে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আসাদুজ্জামানকে সময়ের আলোকে বলেন, আমি অসুস্থ। তাই কথা বলা সম্ভব নয়।
এদিকে, শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মবিরতির কারণে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও স্বজনরা। হাসপাতালে বহির্বিভাগ, ওয়ার্ড ও অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক খুবই কম। ফলে রোগীকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপালে দ্বায়িত্ব পালনরত চিকিৎসকদের।
আন্দোলনের ব্যাাপারে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, চার দফা দাবিতে আদায়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাথে আমাদের প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করেছে। কিন্তু কোন সমাধান না আসায় ২৪ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত পূর্ণ কর্মবিরতি (ক্যাজুয়ালিটিসহ) এবং কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। এই সময়ে আমরা হাসপাতালে কোনো ডিউটি করব না। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বেতন ৩০ হাজার টাকা এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকদের বেতন বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা এবং চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়নসহ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন চিকিৎসকরা। গতবছর ওই ভাতার পরিমাণ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়। তবে তাতে তারা সন্তুষ্ট নন। রোববার সকাল থেকে দেশের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোতে কর্মবিরতি পালন শুরু করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
এদিকে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চরম ভোগান্তিতে রোগীরা কর্মবিরতি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ,বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা।

সম্পর্কিত পোস্ট