সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ইঙ্গিতে এক টেবিলে বিএনপি-জামায়াত

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে বিএনপির। এরপর বিভিন্ন সময়ে এ দুই দলের শীর্ষ নেতারা পারস্পরিক বাকযুদ্ধে জড়ান। এক পর্যায়ে ভাঙন ধরে ২০ দলীয় জোটে। এরপর থেকে দল দুটির নেতাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কাছাকাছি হতে দেখা যায়নি।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর লেডিস ক্লাবে রাজনৈতিক নেতাদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপি। সেখানে একমঞ্চে দেখা গেছে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের।
একসাথে ইফতার করার পাশাপাশি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানকে একান্তে কথা বলতে দেখা যায়। দীর্ঘ বিরতির পর ও জোটে ভাঙনের গুঞ্জনের মধ্যেই তাদের আবারও একমঞ্চে পাশাপাশি বসা রাজনীতিতে নতুন বার্তা বা ইঙ্গিত বলে মনে করছেন অনেকে।
এদিকে, অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলনরে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য দিয়েছেন। বিএনপির ইফতারে তারা পরস্পর-পক্ষের নাম উচ্চারণ না করেই আগামী দিনে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছেন। এদিন সন্ধ্যায় রাজনৈতিক নেতা ও বিশিষ্টজনদের জন্য দলটির আয়োজিত ইফতারে বিএনপি, জামায়াত, নাগরিক ঐক্যসহ সমমনাবিরোধী দলগুলোর নেতারা অংশগ্রহণ করেন।
ইফতারে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কঠিন সময় অতিক্রম করছি। ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী শক্তি গোটা জাতির ওপর, আমাদের সব আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধূলিসাৎ করে দিয়ে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার তৎপরতা চালাচ্ছে। আমাদের সব দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। গণতন্ত্র যারা চাই, যারা কল্যাণমূলক দেশ চাই, তাদের অবশ্যই ৩১ দফাকে সামনে রেখে আন্দোলন করতে হবে। এক দফা আন্দোলন যে শুরু করেছিলাম, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তার শেষ করতে হবে।’
বক্তব্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য প্রাণ বিসর্জনকারী নেতাকর্মীদের স্মরণ করেন মির্জা ফখরুল।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘৭ জানুয়ারি, তার আগে ও এখন পরিস্থিতির বস্তুগত কোনও পরিবর্তন হয়নি। রাজনৈতিকভাবে মানুষ সংঘবদ্ধ। এই লড়াইয়ে জিততে হবে, মানুষের মধ্যে এই বোধ বেশি। আরও বেশি ঐক্য করে, আরও বেশি আন্দোলনে যাবো। এই হোক আজকের শপথ।’
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘গোটা জাতি জুলুমের শিকার। আমরা যেন আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে পারি, হে মাবুদ তুমি আমাদের শক্তি জোগাও। এই সংগ্রামে ভেদাভেদ বা বিরোধ নয়, মানুষের মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ লড়াই করি আসুন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের একটি পর্যায় অতিক্রম করেছি। আমরা একনায়কতন্ত্রের সরকারকে বিদায় দেবো। আমরা ঐক্যে বিশ্বাস করি। জাতিকে আমরা ঐক্য করে, ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবো।’
দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমরা গভীর সংকটে আছি। আন্দোলন সফল হয়েছে। জনগণ ভোট বর্জন করেছিল। কৌশল ও নীতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা আন্দোলন গড়ে তুলে এই সরকার হটাবো।’
সমমনা জোটের নেতা খন্দকার লুৎফুর রহমান তার বক্তব্যে ভারতের সমালোচনা করেন। তিনি দাবি করেন, ইফতারও করতে দিচ্ছে না সরকার।
বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব ও ১২ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘কে ডান, কে বাম, কে মধ্য, এখন তা দেখার সময় নয়। একসঙ্গে রাজপথে মিছিল করবো। গুটি কয়েকজনের জন্য পারিনি। তাদের আমরা চিহ্নিত করেছি। আমাদের বিভাজনের চেয়ে ঐক্যের রাজনীতি করতে হবে।’
শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় বিএনপির ইফতারে দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা নেছারুল হক। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদের দায়িত্বশীলরা।

সম্পর্কিত পোস্ট