শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৈরিতা অত্যন্ত প্রকট: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো কোনো আলাপ আলোচনা দেখছি না। তাদের মধ্যে বৈরিতা অত্যন্ত প্রকট। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এই প্রকট বৈরিতাটা রাখলে সামনে এগিয়ে যাওয়া খুব কঠিন হবে। এই বৈরিতা পরিহার করে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। এছাড়া  নির্বাচন কমিশন কখনো একা অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না, যদি না রাষ্ট্র এবং সরকারের পলিটিক্যাল উইল সপক্ষে থাকে। রাষ্ট্রের যদি পলিটিক্যাল উইল সপক্ষে থাকে তাহলে প্রশাসন, পুলিশ, আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে বাধ্য।
রোববার (২ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে টিআইবি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল, চার নির্বাচন কমিশনার ও  ইসি সচিব  শফিউল আজিম এবং টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানসহ পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
বৈঠক শেষে  সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, তাদের (টিআইবি) মূল দাবিটা ছিল আমরা যেন দ্রুত তথ্যটা দিই। উনারা তথ্যের অবাধ প্রবাহ চাচ্ছেন। যেকোনো তথ্য যেন আমরা ওয়েবসাইটে তুলে দিই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উনারা বলেছেন, আমাদের দায়িত্ব হয়তো কিছুটা পালন করছি না। আমরা বলেছি সেটা, আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে যেমন হলফনামায় কে কী সম্পত্তির বিবরণ দিল, সেটা আমাদের কাছে থাকবে, বা আপলোড করে দিচ্ছি। যে কেউ তথ্য নিতে পারেন, দুদক নিতে পারে। আমরা সহযোগিতা করবো আমাদের  বলা হয়নি তাদের স্টেটমেন্ট বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নিতে। কোনো কর্তৃত্ব বা দায়িত্ব আমাদের দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, বৈঠকে টোটাল নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে কথা হয়েছে, নির্বাচনটা অংশগ্রহণমূলক হয়নি। তবে ফেয়ার হয়েছে। একটা দক্ষতার অভাব রয়েছে। সেটা উনারা জোর দিয়ে বলেছেন। আমরা বলেছি, আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ করা। সমস্যা অনেকটাই রাজনৈতিক। রাজনৈতিক সমস্যা নিরসন না হলে, নির্বাচন ব্যবস্থাটা আরও স্টেবল হবে না।
সিইসি আরও বলেন, পদ্ধতিগতভাবে যদি উন্নয়ন করা যায় ব্যক্তির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে যেমন- একটা হচ্ছে ডিজিটাল ডিভাইস, আরেকটা হলো সিস্টেম অব ইলেকশন। আমরা বলেছি, উনারাও বলেছেন প্রপোরশনাল বলে একটা সিস্টেম আছে। আনুপাতিক হারে সংসদে প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা, যেটা আমাদের সংসদে নারী আসনের ক্ষেত্রে আছে। সেই সিস্টেমের কথা আমরাও বলেছি, উনারাও বলেছেন। আমরা বলেছি এগুলো নিয়ে আপনারা গবেষণা করতে পারেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে যদি আপানারা বলতে পারেন ক্ষমতা থেকেও নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ করা যায়, যায় কিনা সেটা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যদি কোনো গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব পাশ করতে পারেন, সংসদ থেকে, তাহলেও যে আপনারা বলছেন জনগণ অংশ নিচ্ছেন না, এগুলোও কমে আসবে। আর আমরা মনে করি, জাতীয় নির্বাচনটা যদি একাধিক দিনে করা যায়, তাহলে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ হয়ে যাবে। ভোটকেন্দ্রে অধিক সংখ্যক ফোর্স মোতায়েন সহজ হবে। মনিটরিংটা সহজ হবে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, আমরা সব অ্যাকশন নিই না। কিছু অ্যাকশন রিটার্নিং কর্মকর্তা নেন হলফনামা বাছাই করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা, সে-ই নির্বাচন কমিশন। শত শত আপিল হয়, এখানে বাতিল হলে কোর্টে যায়, সেখানে ফিরে পায়। আবার আপিলে যায়। সেখানকার সিদ্ধান্তগুলো চ্যালেঞ্জ করি। আমাদের সীমিত সামর্থ্যে আমরা চেষ্টা করি। আমাদের যে অনন্ত সক্ষমতা আছে, সেটা মোটেই না।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমরা হয়তো আমাদের রিপোর্টে পরামর্শ রেখে যাব। আমরা তো চলেই যাবে, পরবর্তী কমিশন যেন করতে পারে। সব দল বসেই তো ভারত ভাগ হলো। সেটা তো একদিনে হয়নি। টিআইবিকে বলেছি, আপনাদের মতো আরও সিভিল সোসাইটি আছে, তারাও ভূমিকা পালন করতে পারেন।
এদিকে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এমন একটি সংসদ পেয়েছি যেটা হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের একচ্ছত্র ভুবন। সেখানে বিরোধী দল নেই। এদের মধ্যে বিশাল সংখ্যক ব্যবসায়ী রয়েছে। এই সংসদ কতটুকু কার্যকর হবে, জনকল্যাণমূলক হবে, ব্যবসায়িক স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত হবে তা আমরা পাঁচ বছর পর্যবেক্ষণ করব।
তিনি বলেন, নির্বাচন কেন্দ্রিক জাতির যে প্রত্যাশা, সেই জায়গায় আমরাও একই নৌকার যাত্রী। ইসি বলছে, তারাও সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক সেটা চায়। আমরাও সেটা চাই। এ কারণে আমরা উভয়পক্ষই মনে করছি, আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একই রকম। তবে আমাদের কাজের পদ্ধতিতে পার্থক্য আছে এবং আমাদের ক্ষমতা ও এখতিয়ারেও পার্থক্য আছে। আমরা চাহিদা সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠান। নির্বাচন কমিশন ডেলিভারি দেওয়ার মতো প্রতিষ্ঠান। তবে উভয়পক্ষের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য যেহেতু এক, তাই আমরা নিজেদের সহযোগী মনে করছি। এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বলেছি নির্বাচনী ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো দরকার। এ বিষয়ে কমিশন একমত হয়েছে। কমিশন তার এখতিয়ারের মধ্যে দায়িত্ব পালন করেছে। তবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টিতে ব্যর্থতা ছিল।
টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, সাংবিধানিক কারণে নির্বাচনকালীন সরকার আগের ব্যবস্থায় ফিরে যেতে পারবে না। তবে নির্বাচনকালীন সরকার এমন হতে হবে যেখানে স্বার্থ থাকবে না এবং সমান সুযোগ প্রতিষ্ঠা পাবে। এজন্য সবচেয়ে ভালো ভূমিকা পালন করতে পারবে দলগুলো। যদি সবগুলো দল অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না চায়, তবে জনগণের ভোট নিশ্চিত হয়েছে এমন নির্বাচন বলাটা খুবই কঠিন হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট