সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মুক্তি পেয়েছেন খালেদা জিয়া

অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
মঙ্গলবার (০৬ আগস্ট) বিকেলে এক আদেশে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাকে মুক্তির আদেশ দেন। এদিকে ছাত্র জনতার সফল আন্দোলনকে গণ অভ্যুত্থান হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।  ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক বিজয়ে তাদেরকে তিনি অভিবাদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জনতা ন্যায়ের ও গণতন্ত্রের পক্ষে আছে।
চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন চিকিৎসক ও নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক সময়ের আলোকে সোমবার (৫ আগস্ট) রাতে এসব তথ্য জানান।
ওই চিকিৎসক বলেন, হয়তো এই সপ্তাহের মধ্যেই খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। মুক্তির মিছিলে ব্যাপক জমায়েতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মী জনতার ঢল নিয়ে তিনি কার্যালয়ে যাবেন। চলমান সার্বিক পরিস্থিতিতে দেশের সর্বস্তরের দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
মেডিকেল বোর্ডের ওই সদস্য জানান, ছাত্র জনতার আন্দোলনের শুরু থেকে খোঁজ খবর রাখছিলেন খালেদা জিয়া। সোমবার শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার খবর তিনি টেলিভিশনে দেখেছেন। এরপরই তিনি তার ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন।
এদিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। তার ঘুম ও খাওয়া দাওয়া স্বাভাবিক নিয়মে হচ্ছে। স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটারগুলো সঠিক মাত্রায় রয়েছে। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় কেবিনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মেডিকেল বোর্ডের আরেকজন সদস্য সোমবার (৫ আগস্ট) রাতে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এডেএম জাহিদ হোসেনও জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের অবস্থা স্থিতিশীল আছে। দেশবাসীর কাছে উনার জন্য দোয়া চান।
এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। গত ২২ জুন গভীর রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ারের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরদিন তার হৃদযন্ত্রে বসানো হয় পেসমেকার। চিকিৎসা শেষে গত ২ জুলাই এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সবশেষ বাড়ি ফেরার ছয় দিনের মাথায় ফের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। হঠাৎ প্রেশার ও রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় গত সোমবার রাতে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটি সদস্য মির্জা আব্বাস
গুলশান চেয়ারপার্সন অফিস থেকে অনলাইনে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখান থেকে তারা এভার কেয়ার হাসপাতালে যান খালেদা জিয়াকে দেখতে। সঙ্গে ছিলেন বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও আশরাফ উদ্দিন নিজাম।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তির পর গত চার বছরে খালেদা জিয়াকে বিভিন্ন সময়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকতে হয়েছে। দিনের হিসাবে যা প্রায় ২৬০ দিন। আর কারাবন্দির পর থেকে এ পর্যন্ত ছয় বছরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং এভারকেয়ার হাসপাতাল মিলিয়ে খালেদা জিয়া দেড় বছরের বেশি সময় হাসপাতালে থেকেছেন। সবশেষ গত ৮ জুলাই ভোর ৪টা ২০ মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি হন। সেই থেকে হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন তিনি।
দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালে কারাগারে যেতে হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতে তার পরিবারের আবেদনে সরকার নির্বাহী আদেশে দুই শর্তে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। শর্ত হলো, তাকে নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। গত তিন বছরে পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে কয়েক দফা অনুমতি চাইলেও ওই শর্তের যুক্তি দেখিয়ে প্রতিবারই তা নাকচ করেছে সরকার।
এর আগে লন্ডন থেকে এক ভিডিও বার্তায় দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দেশের সর্বস্তরের জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়াও সেনা সদর দপ্তরে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সেনাপ্রধানের সঙ্গে সুন্দর বৈঠক হয়েছে। এসময় শিক্ষার্থী ও দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সম্পর্কিত পোস্ট