শেষ সময়েও বলপ্রয়োগ করে আরও রক্তপাতের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
সোমবার (০৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় প্রায় এক ঘণ্টা বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের চাপপ্রয়োগ করেন শেখ হাসিনা। তিনি কিছুতেই মানতে চাচ্ছিলেন না, যে পরিস্থিতি একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। পরে শেখ রেহেনাসহ পরিবারের সদস্যরা বোঝানোর পর পদত্যাগে রাজি হন এবং দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত নিয়েই দ্রুততম সময়ে পদত্যাগ করে সামরিক হেলিকপ্টারে দেশ ছাড়েন তিনি। এ সশয় তার সঙ্গে বোন শেখ রেহানাও ছিলেন।
একাধিক সূত্র বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার শেষ চার ঘণ্টার তথ্য অনুযায়ী, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা হয়ে দিল্লি পৌঁছেছেন তিনি। সেখান থেকে তাঁর যুক্তরাজ্য যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রোববার দলীয় নেতা ও অস্ত্রধারী কর্মীদের নামিয়ে সারাদিন দেশ জুরে ব্যাপক সংঘাত ও প্রাণহানি ঘটানোর পরও ছাত্র-জনতার আন্দোলন সামাল দিতে পারেননি শেখ হাসিনা সরকার। অবশ্য রোববার রাতেই পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরে শেখ হাসিনার একজন উপদেষ্টা ও কয়েকজন নেতা তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তাঁরা সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরামর্শ দেন বলে জানা গেছে।
শেখ হাসিনা কোনভাবেই তা মানতে চাননি, উল্টো সোমবার থেকে কারফিউ আরও কড়াকড়ি করতে নির্দেশনা দেন। সকাল থেকে কারফিউ আরো কড়াকড়ি করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও ৯টার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীরা কারফিউ ভেঙে রাস্তায় অলিতে গলিতে নামতে শুরু করেন। ১০টার মধ্যে ঢাকার প্রবেশ মুখসহ বিভিন্ন স্থানে জমায়েত বড় হতে থাকে।
একাধিক সূত্র বলছে, সকাল সাড়ে ১০ টায় তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশের আইজিপিকে শেখ হাসিনার গণভবনে ডাকা হয়। এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী কেন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না। আন্দোলনকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁজোয়া যানে উঠে লাল রং দিয়ে দিচ্ছেন, সামরিক যানে পর্যন্ত উঠে পড়ছেন- এর পরও কেন তারা কঠোর হচ্ছে না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন বিশ্বাস করে আপনাদের শীর্ষ পদে বসিয়েছ তাহলে কেন।
একপর্যায়ে শেখ হাসিনা আইজিপিকে দেখিয়ে বলেন, তারা (পুলিশ) তো ভালো করছে। আপনারা পারছেন না কেন? তখন আইজিপি বলেন, পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গেছে, তাতে পুলিশের পক্ষে আর বেশি সময় এ রকম কঠোর অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব হেব না।
এ সময়ে শীর্ষ কর্মকর্তারা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও, বলপ্রয়োগ করে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথা বলেন। শেখ হাসিনা কোন ভাবেই মানতে চাচ্ছিলেন না। তখন কর্মকর্তারা শেখ রেহানার সঙ্গে আরেক রুমে আলোচনা করেন এবং তাঁকে পরিস্থিতি জানিয়ে শেখ হাসিনাকে বোঝাতে অনুরোধ করেন।
শেখ রেহানা এরপর শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেন। কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতা ধরে রাখতে অনড় থাকেন। একপর্যায়ে একজন শীর্ষ কর্মকর্তা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন। পরবর্তিতে জয় তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। এর পরই শেখ হাসিনা পদত্যাগে রাজি হন। তিনি তখন একটা ভাষণ রেকর্ড করতে চান জাতির উদ্দেশে প্রচারের জন্য।
শেখ হাসিনা ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে হেলিপ্যাডে আসেন। তারপর তাঁরা বঙ্গভবনে যান। সেখানে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বেলা আড়াইটার দিকে সামরিক হেলিকপ্টারে ভারতের উদ্দেশে রওনা করেন শেখ হাসিনা।
ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর অনুযায়ী, হেলিকপ্টারটি ভারতের আকাশে প্রবেশের পর কিছুক্ষণ আকাশেই উড্ডয়ন করে। পরে আগরতলায় বিএসএফের হেলিপ্যাডে অবতরণ করে। তারপর সেখান থেকে দিল্লি যান।