শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সারা দেশের মতো চাঁদপুরেও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় আগুন, ভাঙচুর ও গণপিটুনিতে হত্যাসহ নানা সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এসব থেকে বেরিয়ে শান্তিপূর্ণ চাঁদপুর জেলা গঠনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের জনগন। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে খোলা হয়েছে জেলা ও উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
বুধবার (৭ আগস্ট) সকাল ১১টা থেকে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত জেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসান। বক্তব্য দেন- চাঁদপুরে দায়িত্বরত সেনাবাহিনী লে. কর্নেল তাকবীর আবদুল্লাহ।
লে. কর্নেল তাকবীর আবদুল্লাহ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে আমরা কীভাবে বেরিয়ে আসব সে লক্ষ্যে আমাদের এক সঙ্গে বসা। একেবারে গ্রাম থেকে আমাদের নিরাপত্তার কাজটি শুরু করতে হবে। কারণ আমি জেলার ৮ উপজেলায় ঘুরে দেখেছি। লোকজন আমাদের দেখলে চলে যায়, আমরা চলে এলে আবার ফিরে আসে। এরপরই আমাদের কাছে নানা ঘটনার বিষয়ে ফোন আসে। সবাই যেন বলে আমাদের মধ্যে সহমর্মিতা আছে। কেউ কেউ এখন পরিস্থিতির কারণে সুযোগ নিতে চাচ্ছে।
দুষ্কৃতকারীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব। তাতেও আমাদের পদ্ধতি অবলম্বন হবে। কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। জেলাকে রক্ষা করায় আমাদের সবার আন্তরিক হতে হবে। এখন কথা কম বলে কাজ করতে হবে। জেলায় যারা কাজ করবেন, তারা উপজেলায় যাবেন। দুষ্কৃতকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, গত দুদিনে সুযোগ সন্ধানীরা এসব সহিংস কাজ করেছে। আমরা জনগণের সেবা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাই। আলোচনার মাধ্যমে অনেক কথা এসেছে। এখন কাজের জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ দরকার। যেটি জেলা ও উপজেলায় ইউএনও অফিসে হবে। প্রত্যেক উপজেলায় আমরা বলেছি এভাবে সেবা করার জন্য। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিও থাকবে। সর্বদলীয় মনিটরিং কমিটি হবে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে কোনো ব্যক্তির দায় পুলিশ নেবে না। যারা জুলুম নির্যাতন করেছে, তাদের বিষয়ে অভিযোগের আলোকে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের পুলিশের আইজিপিসহ পরিবর্তন এসেছে। উনারা দায়িত্ব নেওয়ার পর যেভাবে নির্দেশনা দেবেন সেভাবে আমরা কাজ করবো।
তিনি আরও বলেন, নানা কারণে পুলিশের মধ্যে একটি ভয় কাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে যদি আমি নিজে নির্ভয়ে গাড়ি নিয়ে প্রত্যেক উপজেলায় ঘুরতে পারি তাহলে বাকিদের মধ্য থেকে ভয় কেটে যাবে।
জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহম্মেদ মানিক প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা অন্যায় কাজে জড়িত তাদের ধরার জন্য দল থেকেই কাজ শুরু করেন। যারা অপরাধী তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। পৌরসভায় ও ইউনিয়ন পরিষদে দালাল থাকবে না। সেখানে প্রয়োজনে প্রশাসক নিয়োগ দেন।
তিনি বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা থাকলে ২৪ ঘণ্টায় বদলে যাবে চাঁদপুরের চিত্র। কাজের জন্য যেখানে লোকবল প্রয়োজন আমাদের চাহিদা দেন। এক বছর আমার পকেট থেকে খরচ দেওয়া হবে। জেলার সুন্দর পরিবেশের জন্য প্রয়োজনে রক্ত দেব।
চাঁদপুর জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আব্দুর রহিম বলেন, সহিংসতা নিরসন ও মানুষের মনের মধ্যে থেকে আতঙ্ক কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রত্যেক মসজিদে জেলা প্রশাসক সমন্বয় করে বার্তা পাঠান। কোনো ধরনের উত্তেজনামূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি যাতে না হয় সেজন্য আমরাও বাহিরের কর্মসূচি স্থগিত রেখেছি।
এছাড়াও সভায় বক্তব্য দেন- জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সলিম উল্লাহ সেলিম, গণফোরামের জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট সেলিম আকবর, হেফাজতে ইসলাম জেলা সভাপতি মাওলানা লিয়াকত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জেলা সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত, বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাদিম পাটওয়ারী প্রমুখ।
সভায় গোয়েন্দা সংস্থা, প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।