সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। রাষ্ট্রপতি শনিবার (১০ আগস্ট) এই নিয়োদ দেন। এর আগে, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শনিবার দুপুরে পদত্যাগ করেন। শনিবার বিকেলে আপিল বিভাগের আরো পাচজন বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। এরা হলেন বিচারপতি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন। আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবরে তাদের পদত্যাগপত্র পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান বিচারপতির নির্দেশনা অনুসারে, ফুল কোর্ট সভা ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সকাল সোয়া ১০টার ফুল কোর্ট সভা বন্ধ করা হয়েছে বলে জানানো হয়। ফুল কোর্ট সভা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া তার ফেসবুক পেজে সকালে স্ট্যাটাস দেন। তিনি তার স্ট্যাটাসে বিনা শর্তে প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে ও ফুল কোর্ট মিটিং বন্ধ করার দাবি জানান। একই সময়ে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পদত্যাগ দাবিতে শনিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বর্ধিত ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল শনিবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, গণ-আন্দোলন থেকে পদত্যাগের দাবি উঠলে সেটিকে কতটুকু সম্মান প্রদর্শন করতে হয়, সেটা প্রধান বিচারপতি বুঝতে পারবেন বলে প্রত্যাশা থাকবে। আইন উপদেষ্টার এমন মন্তব্যের পরপরই শনিবার দুপুরে প্রধান বিচারপতি জানান যে তিনি পদত্যাগ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরপর শনিবার বেলা দুইটার দিকে সেনাবাহিনীর অনুরোধে আন্দোলনকারীরা হাইকোর্ট এলাকা ছেড়ে চলে যান।
পদত্যাগের আগে প্রধান বিচারপতি অভিযোগ করে বলেন, বিচার বিভাগকে বাঁচানোর জন্য, কারণ সুপ্রিম কোর্ট আক্রমণ করার ঘোষণা দিয়েছে। সহকর্মী বিচারপতিরা আছেন তাদের আক্রমণ করার কথা এসেছে। ইতিমধ্যে প্রধান বিচারপতির বাসভবন আক্রমণ করে সব লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের (বিচারপতিদের) বাসা-ঘর আক্রান্ত হতে পারে, ইতিমধ্যে কিছু জজ কোর্ট বাইরে আক্রমণ হয়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
প্রধান বিচারপতি পদত্যাগের পর অন্তর্বতীকালীন সরকারের আইন ও বিচার উপদেষ্টা আসিফ নজরুল শনিবার বিকালে ফেইসবুকে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, আমাদের প্রধান বিচারপতি কিছুক্ষণ আগে পদত্যাগ করেছেন। উনার পদত্যাগপত্র ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে এসে পৌঁছেছে। এটা উপযুক্ত প্রসেসিংয়ের জন্য আমরা কালবিলম্ব না করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেব। এবং আমি আশা করব যে এটা খুব দ্রুত, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমেদ ভুইয়া শনিবার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, আপিল বিভাগের পাচজন বিচারপতি আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। এরা হলেন বিচারপতি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন। আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবরে তাদের পদত্যাগপত্র পাঠানো হয়েছে। তারা ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগের আগে সৈয়দ রেফাত আহমেদ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৫৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের সাবেক অধ্যাপক ড. সুফিয়া আহমেদ তার মা। বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ১৯৮৪ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। বিগত ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। বিগত ২০০৫ সালে তিনি হাইকোর্ট বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।