দেশের ১২ সিটি করপোরেশনের মেয়র, ৩২৩ পৌরসভার মেয়র এবং ৬০ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ৪৯৩ উপজেলা চেয়ারম্যানকে অপসারণ করেছে সরকার। অপসারণ হওয়া মোট ৮৮৮ জন স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির
সোমবার (১৯ আগস্ট) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় পৃথক চারটি প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে এসব স্থানীয় সরকারে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’, ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’, ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ ও ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। পরে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়।
ওই সংশোধনীর ফলে বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে সরকার জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরকে অপসারণ করতে পারবে। একইভাবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে সরকার।
সোমবার ১২ সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১২ সিটি করপোরেশন হলো-
ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রংপুর, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ।
ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে অতিরিক্ত সচিব ও সমমর্যাদার কর্মকর্তাদের প্রশাসক করা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনে বিভাগীয় কমিশনারদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এর আগে স্থানীয় সরকার বিভাগের পৃথক আদেশে দেশের ৪৯৩টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা হয়। তাদের জায়গায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের পাশাপাশি দেশের ৬০টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সব (৩২৩টি) পৌরসভার মেয়রকেও অপসারণ করা হয়। এছাড়া মৃত্যুজনিত কারণে নাটোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ এবং খুলনার কয়রা উপজেলার চেয়ারম্যান পদটি শূন্য ঘোষণা করে সেখানেও প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
৮টি জেলা পরিষদে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে (সার্বিক) এবং ৫৩টি জেলা পরিষদে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসককে (ডিসি) প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব কর্মকর্তা নিজ নিজ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই আত্মগোপনে চলে যান। জেলা ও উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার প্রায় সব মেয়র ও চেয়ারম্যান পদই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দখলে ছিল।
এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইন সংশোধন করে মেয়র-চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগের সুযোগ তৈরি করার পর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।