সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

দুর্নীতির খবর প্রকাশ করায় সময়ের আলোর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা

কাস্টমসের সাবেক কমিশনার ড. এসএম হুমায়ূন কবিরের অবৈধ আয় তথা দুর্নীতির খবর প্রকাশ করায় পাঠক নন্দিত দৈনিক সময়ের আলোর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কমলেশ রায়, প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ্ ও জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক এসএম মিন্টুর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলায় মানহানীর অভিযোগ এনে ১০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সরকারি বন্ধের দিনে আদালতের সমন জারিকারক সময়ের আলোর কার্যালয়ে এসে মামলার কপি দিয়ে গেছেন। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হতে সময়ের আলোর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, প্রকাশক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। উল্লেখ্য গত ২৫ আগস্ট ঢাকার ১ম যুগ্ম জেলা আদালতে বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেছেন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা ড. এসএম হুমায়ূন কবির। যদিও
জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিভিন্নখাতের দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের সম্পর্কে তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। অন্তর্বতীকালীন সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের সঙ্গে গণমাধ্যমগুলোও দুর্নীতিবিরোধী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সাবেক কাস্টমস কমিশনার ড. এসএম হুমায়ূন কবিরের বিরুদ্ধে নানা তথ্যউপাত্তসহ লিখিত অভিযোগ পড়ে। সেই অভিযোগের কাগজপত্রের ভিত্তিতে গত ১৯ আগস্ট দৈনিক সময়ের আলোতে কাস্টমস অধিদফতরের সাবেক কমিশনার ড. এসএম হুমায়ূন কবিরের বিরুদ্ধে চাকরিকালীন সময়ে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ নিয়ে খবর প্রকাশ করা হয়। এছাড়াও তার অবৈধ সম্পদের বিষয়ে সময়ের আলোর পক্ষ থেকে আরো অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। এই তথ্য কোনোভাবে জানতে পেরে নতুন করে বিপদের আঁচ পেয়ে প্রকাশের পরই ড. এসএম হুমায়ূন কবির সময়ের আলোর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, প্রকাশক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে মানহানীর মামলা করেছেন বলে জানা যায়।
সময়ের আলোর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কমলেশ রায় বলেন, দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে সময়ের আলো সব সময়ই জোরালো ভূমিকা রেখে সংবাদ প্রকাশ করে গেছে। আগামিতেও দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানে আপোসহীন নীতি অনুসরণ করে যাবে দৈনিক সময়ের আলো।
তিনি বলেন, দুর্নীতির খবর প্রকাশ করায় ড. এসএম হুমায়ূন কবির যে মানহানির মামলা দায়ের করেছেন সেটা মূলত তিনি তার বিষয়ে দুর্নীতির তদন্ত বা ব্যবস্থা গ্রহণ থেকে নিজেকে বাঁচানোর কৌশল বলে মনে করি। কেননা, তার বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগে খবর প্রকাশিত হয়েছে সেখানে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের অংশ হিসেবে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আলাদা প্রতিবাদলিপি পাঠালে সেটিও ছাপানো হয়েছে। তারপরও মানহানির মামলা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে গণমাধ্যমের দুর্নীতিবিরোধী খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রকারান্তে হুমকি স্বরূপ।
তিনি আরও বলেন, ড. এসএম হুমায়ূন কবিরের দায়েরকৃত মানহানি মামলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেবে সময়ের আলো।
দুদকে জমা দেওয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, কাস্টমসের সাবেক কমিশনার ড. এসএম হুমায়ূন কবির ১৯৯৪ সালের ২৫ এপ্রিলে ১৩তম বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। তার গ্রামের বাড়ি যশোর জেলার পুরাতন কসবা উপজেলার পালবাড়ি মোড়ে। তবে নিজেকে পরিচয় দিতেন গোপালগঞ্জের লোক হিসেবে। গোপালগঞ্জের বাসিন্দা পরিচয় ও পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা ভাইয়ের যোগশাজসে ড. হুমায়ূন কবির দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের নামে বিপুল অবৈধ অর্থ ও সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
কাস্টমস অধিদফতরের সাবেক কমিশনার ড. এসএম হুমায়ূন কবিরের বিরুদ্ধে চাকরিকালীন সময়ে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। এরই মধ্যে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছেন এক ব্যক্তি। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, উচ্চ সিসির গাড়ির সিসি কম দেখিয়ে শুল্ককর ফাঁকি, ঋণখেলাপি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে কর মওকুফ এমনকি শেয়ার কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিলেন এই কর্মকর্তা। দুদকে জমা পড়া অভিযোগে উঠে এসেছে তার দুর্নীতি আর ঘুষ বাণিজ্যের চিত্র।
ভুয়া অভিযোগের মাধ্যমে সিআইডিতে কর্মরত ড. এসএম হুমায়ূন কবিরের ছোট ভাই পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম দুদকের মানি লন্ডারিং সেলে কাজ করার সুবাদে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে চিঠি ইস্যু করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি ও অবৈধ অর্থ গ্রহণ করতেন।
যদিও এসব অভিযোগের বিষয়ে গত ১৯ আগস্ট দৈনিক সময়ের আলোতে প্রকাশিত ‘সাবেক কাস্টমস কমিশনার হুমায়ূন কবিরের দুর্নীতি; সিন্ডিকেট গড়ে সম্পদের পাহাড়’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ড. এসএম হুমায়ূন কবিব নিজেকে নির্দোষ এবং ষড়যন্ত্রের শিকার দাবি করেন। পরে প্রতিবেদকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চান ড. হুমায়ূন কবির।
সময়ের আলোর সিনিয়র রিপোর্টার এসএম মিন্টু হোসেন বলেন, ড. এসএম হুমায়ূন কবিরের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগের ভিত্তিতেই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সময়ের আলো তার দুর্নীতির বিষয়ে আরও অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে।

সম্পর্কিত পোস্ট