সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সংস্কার ও নির্বাচনকে পাশাপাশি নিয়ে যেতে হবে : মঈন খান

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন বলেছেন, আজকে সরকার যৌক্তিক সময় দাবি করছে, বিষয়টি এমন অবস্থান থেকে দেখতে হবে। যৌক্তিক সময় নির্ধারণ করা কঠিন। সংস্কার ও নির্বাচনকে পাশাপাশি নিয়ে যেতে হবে।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গুলশানের একটি হোটেলে ‘গণতন্ত্র উত্তরনে অন্তর্বতীকালীন সরকার তথা রাজনৈতিক দলের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে অত্যাবশকীয় সংস্কার ও নির্বাচন প্রকৃয়াকে পাশাপাশি রাখার দাবি জানিয়েছে, রাজনৈতিক শিক্ষার্থী ও সুশীল সমাজ। পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এছাড়াও বৈঠকে উঠে আসে, সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রক্রিয়া দ্রুত সময়ে নেয়ার তাগিদ দেয়া হয়। এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে মিলিনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয় ও খান ফাউন্ডেশন।
মঈন খান বলেন, এই সরকারকে ম্যান্ডেড দিয়েছে ছাত্র-জনতা। আজকে ৫৩ বছর পরে ছাত্র-জনতা যা করছে তা ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। যা কোনো রাজনৈতিক দল করতে পারেনি। এর কারণও যৌক্তিক কারণ আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় দিতে চেয়েছিলাম। আমরা ১৭ টি জীবন দিয়েছি আর ছাত্ররা ১৭ দিনে ১৭শ জীবন দিয়েছে। এ কারনেই তারা সফল হতে পেরেছে।
তিনি বলেন, দেশের বিষয়ে যে কোনো সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব এখন বর্তমান সরকারের। মানুষ জবাব চাইছে বিএনপির কাছে। কারণ মানুষ মনে করছে বিএনপি সরকারে চলে এসেছে। মানুষের এই পারসেপশনের বাস্তবতা অস্বীকার করা যাবে না।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, গণতন্ত্র পুণ:রুদ্ধার করতে সুনির্দিষ্ট কিছু সংস্কার প্রয়োজন। কারণ সব সংস্কার নয়, এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কারর ও নির্বাচনকে পাশাপাশি নিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে অন্ত:বর্তীকালীন সরকারের উচিৎ হবে পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কাঠামো পরিবর্তন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
বিএনপি যুগ্ন মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়, জনগণই দিবে অন্য কেউ নয়। এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব একটা সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের উচিৎ এই মূহুর্তে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষনা করা; কারন কেনো পাইপলাইন ছাড়া যে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে দেশ চালানো অসম্ভব।
বিএনপির এ নেতা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, একটি কুচক্রী মহল ছাত্রদের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর ষড়যন্ত্র করছে; এটা হতে দেয়া যাবেনা। এসব ব্যাপারে অন্ত:বর্তীকালীন সরকারকে কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মহাসচিব সাইফুল হক বলেন, আমাদের লড়াইটা ছিলো ১৬ বছরের আর ছাত্র-জনতার আন্দোলন শেষ হলো ৩৬ দিনে। ১৬ বছরে আমরা অনেক অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে সরকার পতনের যে পেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছিলাম, ছাত্ররা এসে শেষ ধাক্কা দিয়েছে। তিনি বলেন, সরকার বলছে সংস্কার করবে এটা তাদের একার কথা নয় সকল রাজনৈতিক দলের একই দাবি। এই মূহুর্তে হাসিনার বিদায়ে খুশি হলে চলবে না; ৩১ দফা বাস্তবায়নে সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার বলছে সংস্কার হলে নির্বাচন, এটা খুবই হতাশার কথা। সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও জরুরী।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ছাত্র -জনতার জয় পুরো দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। এখন পুরোপুরি গণতন্ত্র ফেরাতে সংস্কার জরুরি। তিনি বলেন, দেশে একটা নির্বাচন ভালোভাবে করতে হলে প্রশাসনকে সাজিয়ে জনবান্ধব পুলিশ গড়ে তুলতে হবে। পুলিশ, সিভিল এডমিনিস্ট্রেশন সব রিসাইকল করে নতুন করে সাজাতে হবে।
মান্না বলেন, একটি উপযোগী ভোট করতে কতোটা সময় লাগতে পারে সে হিসেব করেই অন্ত:বর্তীকালীন সরকারকে সময় নিতে হবে।
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরু বলেন, এই আন্দোলন ২০১৮ সালে আমরাই লিড দিয়েছিলাম। এখনকার মতো ভুক্তভুগীদের সহায়তা করতে পারিনি এটা অত্যন্ত কষ্টের। ধারাবাহিকভাবে এ আন্দোলনে সব শ্রেনী-পেশার মানুষের সম্পৃতা সমান। এখনো চক্রান্ত চলছে। পুলিশ প্রশাসনকে এই সরকার এখনো নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি, এটা অত্যন্ত জরুরি। প্রসাশনকে ‘মাস্ট বি ক্লিন’ করতে হবে। বিচার বিভাগ এখনো নিরপেক্ষ নয়, যেখানে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন। নতুন নির্বাচন কমিশন, দূনীতি দমন কমিশন দরকার।
তিনি বলেন, একটি অনির্বাচিত সরকার বেশিদিন থাকলে; সেখানে ফরেন ইনভেস্টমেন্ট হবে না। এজন্য নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ সামনে সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের অন্তবতীকালীন সরকারে অত:ভূক্ত করে তাদের সঙ্গে বোঝাপড়া ছাড়া সংকটের সমাধান হবে না।
সুজন সভাপতি ও দি হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশ নতুন করে স্বাধীন হওয়ার পরে এখন পরিবর্তন কিভাবে তা নিয়ে ভাবতে হবে। তবে পরিবর্তন কারো মধ্যেই তেমন হয়নি। ক্ষমতার অপব্যাবহার কমাতে হবে, অতীতের স্বৈরাচার শাসকের পতন থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে নতুন খোলসে আত্নপ্রকাশ করতে হবে; যদি তারা গণতন্ত্রকে দেশে আবার দেশে ফিরিয়ে আনতে চায়।
দি মিলিনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারপার্সন, বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ এডভোকেট রোখসানা খন্দকারের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রর সাবেক মহাসচিব নূর খান লিটন, সাংবাদিক আাশরাফ কায়সার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ফেমার সাবেক সভাপতি মুনিরা খান, মায়ের ডাকের সমন্বক সানজিা ইসলাম তুলি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলে সহ-সভাপতি তানিয়া রব, ড. শায়ন্ত সাখাওয়াতসহ অনেকে।

সম্পর্কিত পোস্ট