সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করা জটিল তবে সাময়িক যুদ্ধবিরতি সম্ভব

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, হামাসের সঙ্গে তবে যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ করার বিষয়টি অনেক জটি। তবে সাময়িক যুদ্ধবিরতি সম্ভব। এই সুযোগও সীমিত হয়ে আসছে।  হামাসকে তেল আবিব সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এপির এক খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, হামাসের সঙ্গে সাময়িক যুদ্ধবিরতির জানালাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বিশ্বাস করেন এই অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তের অস্থির পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। গত সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, গাজায় জিম্মিদের মুক্তির জন্য ছয় সপ্তাহব্যাপী একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির দিকে এগোনো যেতে পারে। গাজায় ক্রমবর্ধমান প্রাণহানির মধ্যে হামাসের স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল তাতে রাজি নয়।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, গাজায় জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে ইসরাইল ছয় সপ্তাহের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির চুক্তি করতে আগ্রহী। চুক্তির সময় পার হওয়ার পর তেল আবিব যথারীতি গাজায় তাদের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করবে বলে জানিয়েছেন ইয়োভ গ্যালান্ট। তিনি বলেছেন, আমরা লক্ষ্য অর্জনে আমাদের অধিকার অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করব। এর মাধ্যমে তিনি গাজা থেকে হামাসকে নির্মূলের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
হামাস এবং ইসরাইলের মধ্যে চলমান ভয়াবহ যুদ্ধের ইতি টানতে মিসর এবং কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র গত এক মাসের বেশি সময় ধরে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও গাজায় যুদ্ধ বিরাজমান। হামাসের দাবি হচ্ছে অনতিবিলম্বে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হবে এবং উপত্যকা থেকে ইসরাইলি সেনাদের প্রত্যাহার করে নিতে হবে। তবে ইসরাইল মাত্র দেড় মাসের জন্য অস্থায়ীভাবে তাদের সেনা প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছে। উভয় পক্ষের ভিন্ন দাবির ফলে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর আলোচনা বাস্তবে রূপ পাচ্ছে না।
ইসরাইলের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি তিন পর্বে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকরের একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে। সেখানে ছয় সপ্তাহের মধ্যে ৭০ জন জিম্মির মুক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইসরাইলের ধারণা এসব জিম্মি এখনও জীবিত রয়েছেন। বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগার থেকে কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিকে মুক্তির পাশাপাশি দেশটির জনবহুল এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছে ইসরাইল। এ ছাড়া গাজায় যারা বাস্তুচ্যুত হয়েছে তাদের নিজ বাসস্থানে ফিরিয়ে আনার সুযোগ দেওয়া হবে। অস্থায়ী এই যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে গাজাবাসীর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সহায়তার সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে তেল আবিব।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি বলেছেন, গাজার মিসরীয় সীমান্তে কৌশলগত করিডোরে ইসরাইলি বাহিনী স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে। গ্যালান্টের মতে, এই করিডোর থেকে ছয় সপ্তাহের জন্য বাহিনী সরানো যেতে পারে। তবে পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ইসরাইলি মন্ত্রিসভায় এ নিয়ে গ্যালান্ট ও নেতানিয়াহুর মধ্যে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডাও হয় বলে জানা গেছে।
মার্কিন মধ্যস্থতাকারীরা একটি তিন পর্বের পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছেন। যার প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি চলাকালীন হামাস কিছু জিম্মিকে মুক্তি দেবে এবং ইসরাইলও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দিতে প্রস্তুত থাকবে। তবে গ্যালান্ট বারবার বলেন, ইসরাইলের যুদ্ধের মূল লক্ষ্য হলো হামাসের সামরিক ও শাসনক্ষমতা ধ্বংস করা এবং ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গ্যালান্ট আরও বলেছেন, এই চুক্তি কেবল গাজাতেই নয়, লেবানন সীমান্তেও উত্তেজনা কমাতে ভূমিকা রাখবে। যদিও হামাস এই ধরনের আংশিক চুক্তি গ্রহণ করবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীরা সমঝোতার জন্য একটি সমন্বিত প্রস্তাব তৈরিতে কাজ করছেন।
এদিকে আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী পশ্চিম তীরের শহর তুলকারেমে একজন পুরুষ ও একজন নারীকে হত্যা করেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরাইলি সেনারা খান ইউনিসের কাছে একটি তাঁবুতে আক্রমণ করেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, সেখান থেকে ১৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, উদ্ধারকর্মীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না বলে আরও বেশি মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলেছে যে তারা হামাসের একটি কমান্ড সেন্টারকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। কিন্তু হামাস দাবিটিকে ‘স্পষ্ট মিথ্যা’ বলে অভিহিত করেছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনে অন্তত ৪১ হাজার ২০ জন নিহত এবং ৯৪ হাজার ৯২৫ জন আহত হয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট