শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আরাকান আর্মির হাতে রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন

বাংলাদেশ সার্বভৌমত্বের শত্রু সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি কর্তৃক চলমান রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ইউনাইটেড ইয়ূথ মুভমেন্ট বাংলাদেশ নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মিকে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ করে রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ উত্থাপন এবং তারা যাতে দেশের পার্বত্য চট্রগ্রাম এলাকায় কোনো ধরনের কার্যক্রম চালাতে না পারে সে ব্যপারেও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ওই মানববন্ধন করা হয়েছে। মানববন্ধনে এ সময় আরও বক্তৃতা করেন ইউনাইটেড ইয়ূথ মুভমেন্ট বাংলাদেশের সভাপতি মু. দ্বায়ীফ সলেমুন, প্রচার সম্পাদক খুবাইব মাহমুদ প্রমুখ।
মানববন্ধনে লিখিত বক্তৃতা পাঠ করে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক এলাহী বলেন, আমাদের এই দক্ষিণ এশিয়ায় এমন একটি জাতি রয়েছে, যারা প্রায় শত বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে নির্যাতন, নিপীড়ন ও গণহত্যার শিকার হয়ে আসছে। যাদের নাম চির নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমারের আরাকান রাজ্য তাদের আদি নিবাস। অথচ আজ নিজ দেশেই তারা অবাঞ্চিত। কেবল মুসলিম হওয়ার অপরাধেই, শত বছর আগে থেকে তাদের উপর যে নির্যাতন শুরু হয়েছে, তা আজও থামেনি। শিক্ষা-দীক্ষা ও নিজ ধর্ম পালনের অধিকার থেকে শুরু করে সব ধরনের নাগরিক ও মানবিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হতে কোণঠাসা হয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ আজ নিকষ কালো আঁধারে মিশে গেছে।
তারা বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতিগত নিধনের শিকার হওয়া নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূলের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ঐতিহ্যবাহী আরাকান রাজ্যকে রোহিঙ্গাশূন্য করে ফেলা। সেই ধারাবাহিকতায় আজও আরাকানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর বিরামহীন নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই ও লুটপাট চলছে অহরহ। গত একশত বছরে আরাকান রাজ্যে কী পরিমাণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে হত্যা করা হয়েছে, তার কোনো হিসাব নেই।
তারা আরও বলেন, বিগত ২০১৭ সালে মায়ানমারের রোহিঙ্গাবিদ্বেষী জান্তা বাহিনী ও মগ সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির পরিচালিত সম্মিলিত গণহত্যায় ৩৬ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাকে অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এছাড়াও প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মা-বোনকে ধর্ষণ করা হয়। সেই বর্বরতম গণহত্যা থেকে বাঁচতে সেসময় প্রায় ১ মিলিয়নেরও অধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৪৮টিরও অধিক রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। যার ফলে আরাকানে ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার নতুন বাস্তচ্যুত মানুষ তৈরি করেছে। এছাড়াও এই সন্ত্রাসীগোষ্ঠী পাঁচ হাজারেরও অধিক রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে এই স্বল্প সময়ে। গতমাসের ৪ ও ৫ তারিখে আরাকানের মংডু শহরে ড্রোন এ্যাটাক চালিয়ে ২০০ এরও অধিক রোহিঙ্গাদের হত্যা করেছে। সেইসঙ্গে অগণিত রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করেছে এই সন্ত্রাসীরা।
বক্তারা আরও বলেন, গণহত্যা ও ধর্ষণের পাশাপাশি সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি বিগত ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার নিরীহ রোহিঙ্গাকে আন্তর্জাতিক মানবপাচার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পাচার করে দিয়েছে। আরও ভয়ানক ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইয়াবা পাচারের মূল কারিগর হলো এই আরাকান আর্মি।

সম্পর্কিত পোস্ট