শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪

তীব্র হামলার মুখে বৈরুতের রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে হাজারো মানুষ

লেবাননে বেকা ভ্যালিতে হামলা জোরদার করেছে ইসরাইল। প্রাণ বাঁচাতে দক্ষিণ লেবানন থেকে হাজার হাজার মানুষ বৈরুতে পালিয়েছে। সেখানকার সড়কগুলো যেন এখন পালিয়ে যাওয়া মানুষদের অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরে পরিণত হয়েছে। এদিকে লেবানন ও গাজায় ইসরাইলের রক্তক্ষয়ী হামলার নিন্দা জানিয়ে গতকাল শুক্রবার ইরান ও ইয়েমেনে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেছে।
খবর বিবিসি ও এএফপির।
গত সপ্তাহ থেকে লেবাননের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে একের পর এক টানা বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। গত সোমবার থেকে লেবাননে ইসরাইলের বিমান হামলায় ৭০০ এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
লেবাননে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের উপপ্রধান ইটি হিগিন্স বিবিসি রেডিও ফোরকে অতিসম্প্রতি বলেছেন, হাজারো মানুষ বৈরুতের দক্ষিণের শহরগুলো ছেড়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ পার্কে, রাস্তায় অথবা গাড়ির ভেতর ঘুমাচ্ছে। শিশুরা ‘ভয়াবহ আতঙ্কগ্রস্ত’ হয়ে আছে বলেও জানান ইটি হিগিন্স। বলেন, কখনো কখনো ভোররাত ৩টার সময়ও বাড়িঘর ছাড়ার নির্দেশ আসে।
বাস্তুহারা এসব মানুষকে সহায়তা করতে ইউনিসেফ আশ্রয়শিবির পরিচালনা করছে। ইটি হিগিন্স বলেন, ‘পানি, খাবার, কাপড় থেকে শুরু করে তাদের সবকিছুরই খুবই প্রয়োজন এবং অতি অবশ্যই একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই।’ পালিয়ে আসা মানুষদের মধ্যে এমন শিশুও রয়েছে, যাদের সঙ্গে কেউ নেই। তাদের পরিবারের বাকি সদস্যরা হয় মারা গেছে কিংবা পরিবার থেকে ওইসব শিশু কোনোভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এই কর্মকর্তা এমন একটি শিশুকে খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন যে শিশুটির পরিবারের বাকি ১৫ সদস্য নিহত হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার রাতভর হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটি বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে তীব্র হামলা চালিয়েছে ইসরাইল, মাটির সঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন। হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ প্রাণ হারিয়েছেন।
শুক্রবার সকালে লেবাননে আরও কয়েক দফায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। আইডিএফ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ইসরাইলি বিমানবাহিনী (আইএএফ) বেকা এলাকা এবং দক্ষিণ লেবাননের আলাদা আলাদা কয়েকটি এলাকায় হিজবুল্লাহর বেশ কয়েকটি অবস্থান লক্ষ্য করে তীব্র বিমান হামলা চালিয়েছে।’
ইরান, ইয়েমেনে বিক্ষোভ : লেবানন ও গাজায় ইসরাইলের রক্তক্ষয়ী হামলার নিন্দা জানিয়ে গতকাল শুক্রবার ইরান ও ইয়েমেনে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনার খবরে বলা হয়, লেবাননে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর প্রতি সমর্থন এবং ‘ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্রের বর্বরোচিত হামলার নিন্দা জানাতে’ কর্তৃপক্ষ আহ্বান জানায়। এতে সাড়া দিয়ে রাজধানী তেহরানসহ দেশটির অন্যান্য শহরে বিক্ষোভ করেছে হাজারো মানুষ।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-সমর্থিত যেসব সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয় আছে, হিজবুল্লাহ তাদের একটি। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সেখানকার ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের প্রতি সমর্থন জানাতে ইসরাইলি ও মার্কিন বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল হিজবুল্লাহ। তবে গত সপ্তাহ থেকে লেবাননে হিজবুল্লাহর অবস্থান লক্ষ্য করে তীব্র বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। লেবাননের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গত সোমবার থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত লেবাননে ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় ৭০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
শুক্রবার ইরান ও ইয়েমেন ছাড়াও বাহরাইনে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। বাহরাইন ইসরাইলের মিত্রদেশ। দেশটির সরকার ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শক্ত হাতে দমন করেছে। এএফপির একজন সাংবাদিক জানান, তেহরানে শুক্রবার জুমার নামাজের পর নগরকেন্দ্রের ইনঘেলাব স্কয়ার ঘিরে বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীদের হাতে হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহর ছবি এবং ফিলিস্তিনি ও হিজবুল্লাহর পতাকা ছিল। তারা ‘ইসরাইলের ধ্বংস, লেবাননের বিজয়’ বলে সেøাগান দেয়।
লেবাননে যে ‘রক্তগঙ্গা বইছে’ তার তীব্র নিন্দাও জানায় তারা। পোড়ায় ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তেহরান ছাড়াও সেমনান, কোম, কাশান, কেরমানশাহ, সিরাজ এবং বন্দর আব্বাস নগরে বিক্ষোভ হওয়ার খবর এবং ভিডিও ফুটেজ প্রচার করা হয়েছে।
ইরান-সমর্থিত আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের আয়োজনে শুক্রবার রাজধানী সানায় কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভের একদিন আগেই হুতি বিদ্রোহীরা ইয়েমেন থেকে ইসরাইলে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। প্রায় এক দশক ধরে সানার নিয়ন্ত্রণ হুতি বিদ্রোহীদের হাতে। শুক্রবার বিক্ষোভের সময় বিক্ষোভকারীদের অনেকের হাতে রাইফেল ছিল। কেউ কেউ প্লাকার্ড হাতে আসেন। হুথি সমর্থক মুরতাদা আল-মুতাওয়াকিল বলেন, ‘আমি লেবাননে আমাদের ভাইদের বলতে চাই, আপনারাই বিজয়ী হবেন। ইসরাইলি শত্রুদের বিরুদ্ধে এটাই প্রথম বা শেষ যুদ্ধ নয়।’

সম্পর্কিত পোস্ট