জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নিয়ে সেনা প্রধানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে এলো নতুন আভাস। ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন দেয়া হয়ত সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে বলেও জানান।
বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারের বিষয়ে বন্দি বিনিময় চুক্তির কথা উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, এই চুক্তি ভারত মানলে তাদের শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। এই চুক্তি সঠিকভাবে মানলে তারা শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য।
ঢালাও মামলা দায়েরের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, বিগত সরকারের সহযোগিতায় গায়েবি মামলা হতো। এগুলো পুলিশ করত। মামলাগুলো তৎকালীন বিরোধীদলের লোকদের বিরুদ্ধে হতো। এখন হচ্ছে ঢালাও মামলা। যারা পূর্বে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল তারাই এই মামলা করছে। এই মামলাগুলোতে যাতে নিরাপরাধ লোক শাস্তি না পান সে বিষয়ে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার।
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার আগ বাড়িয়ে কিছু করবে না। তবে তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি বড় হয়ে উঠেছে। জনপ্রত্যাশা তৈরি হলে নিষিদ্ধ করা হবে। তারা অতীতে কী কাজ করেছে তা দেশবাসী দেখেছে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে তিনি বলেন, তরকারির এত দাম যে বিক্রি কমে গেছে। বন্যার কারণে ডিমের সাপ্লাই কমে গেছে। গত সরকারের আমলে সব নিয়ন্ত্রণ হতো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। তবে এটুকু বলতে পারি সামনে পরিস্থিতি উন্নতি হবে। অনেকক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে।
বিগত সরকারের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যত সর্বনাশ হচ্ছে, সবকিছু ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারের বাই প্রোডাক্ট বা অনিবার্য রিফ্লেকশন হয়ে গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলা প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যখন এতিমের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আসে উনি অবাক হয়ে বলেছেন, এতিমের টাকা আমি আত্মসাৎ করেছি! অথচ সেটা নিয়ে বিচারক লিখলেন-উনি (খালেদা জিয়া) স্বীকার করেছেন। এই রকম একজন জনপ্রিয় নেত্রীকে দিনের পর দিন নির্মম কারাজীবনের মধ্যে থাকতে হয়েছে। উনারা কি বিচারক ছিলেন? উনাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করলাম।
তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটা প্রতিকার চাইতে গেছেন, বিচারকরা নাকি ইমব্যারাজড, শুনবেন না। আমি কমপ্লেইন জানাতে গেলাম, তারা শুনবেনই না। অবশ্য এখানে ভালো বিচারক আছেন। আমাদেরকে নির্মোহভাবে, গভীরভাবে বিচার করতে হবে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট আমরা পুরোটাই বাতিল করার প্রক্রিয়ায় আছি। মানুষ এই নামগুলোই শুনতে পারে না।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি জনগণকে ধৈর্য ধরার কথা বলেন। পাশাপাশি নির্বাচনের জন্য তার প্রত্যাশিত সময়সীমা তুলে ধরে তিনি বলেন, সংস্কারের মধ্য দিয়ে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্রে উত্তরণ’ ঘটা উচিত।