সংবিধান পুনর্লিখন না করে বিদ্যমান সংবিধানই সংশোধন করা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক শাসনে উত্তরণের জন্য সাংবিধানিক সংস্কার’ শীর্ষক এক পরামর্শমূলক সেমিনারে বক্তারা বলেন, বিচার বিভাগকে স্বাধীন করতে হবে। নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইনসভার ক্ষমতার পৃথক্করণ করতে হবে। বিদ্যমান সংবিধানকে আরও গণতান্ত্রিক করা, আরও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের সরকার না আসে, যারা সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে পারে। এ জন্য সংবিধান সংশোধন দরকার।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজ (বিআইপিএস) আয়োজিত এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সৈয়দ মো. দস্তগীর হোসাইন। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুল মতিন। আলোচনায় অংশ নেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজের সভাপতি সি এ এফ দৌলা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উত্তম কুমার দাস, গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুল মতিন বলেন, শাসনতন্ত্রের সংস্কার বলেন, পুনর্লিখন বলেন, যা-ই বলেন, এটির অধিকার তাদেরই, যারা সরকার পরিবর্তন এনেছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় যায়, তাদের নির্বাচনের প্রতি একটি ভয় যে নির্বাচন করা মানে ক্ষমতা চলে যাওয়া।
সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বিচারপতি মতিন বলেন, ইতিমধ্যে যেগুলো স্বীকৃত বা মীমাংসিত বিষয়, এগুলোতে মনে হয় হাত দেওয়া ঠিক হবে না। যেমন ‘রিপাবলিক’। এগুলো বিদ্যমান রেখে এখান থেকে আরম্ভ করতে হবে। যেগুলো না করলেই নয়, সেটির সংস্কার করতে হবে। বিচার বিভাগকে মেরামত করা, এগুলোতে হাত দিতে হবে।
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, একটি বক্তব্য এসেছে, আমরা কি নতুনভাবে সংবিধান লিখব, নাকি আগেরটি সংশোধন করব। তার মত হচ্ছে আগেরটার সংশোধন করাই বাঞ্ছনীয়। কেননা, আগেরটির মধ্যে অনেক মূল্যবান বক্তব্য আছে। ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি আছে। এটিকে আরও গণতান্ত্রিক করা, আরও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের সরকার না আসে, যারা সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে পারে। এ জন্য সংশোধন দরকার।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগের ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে খর্ব হয়েছিল। আইন বিভাগ স্বাধীন দায়িত্ব পালন করেনি। সেটি ক্ষমতাসীন দলের ‘রাবার স্ট্যাম্প’ হিসেবে কাজ করেছে। সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়ে গিয়েছিল নির্বাহী বিভাগের কাছে। সেটির পরিবর্তন অবশ্যই করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, বর্তমানে যারা সংবিধান পুনর্লিখন বা নতুন সংবিধান লিখতে চাচ্ছেন, তা তাদের এখতিয়ারে নেই। তবে সংবিধান সংশোধন হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সৈয়দ মো. দস্তগীর হোসাইন বলেন, এত সংগ্রাম করে দেশ স্বাধীন হলো, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেলাম। পরবর্তী সময়ে ফলাফল শূন্য। এই ছাত্র-জনতা যদি এগিয়ে না আসত, তাহলে যে গর্তে পড়েছিলাম, সেখানেই থাকতে হতো।