রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেখতে চান বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ। একই সঙ্গে রাজনৈতিক পরিসরে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল এবং তাদের অঙ্গ সংগঠনকে ‘ফ্যাসিবাদী দল’ আখ্যা দিয়ে সাংবিধানিকভাবে এসব দলগুলো নিষিদ্ধের দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটির নেতারা।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান নতুন এ ছাত্রসংগঠনটির নেতারা।
এ সময় সংগঠনটির আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ ১৩০ সদস্যের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। সংগঠনটির সদস্যসচিব ফজলুর রহমান।
লিখিত বক্তব্যে আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ‘জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিগঠনের এ লড়াই ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি অবস্থা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। ওই আন্দোলনের নেতা ছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০০২-০৩ সেশনের নির্যাতিত ছাত্র খোমেনী ইহসান, তিনি তৎকালীন নির্যাতন প্রতিরোধ ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ও সেনাবাহিনীর মামলার আসামি ছিলেন।
জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ধারনার এ প্রস্তাবক চব্বিশের কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময়ও ছাত্র আন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানে রূপ দিয়ে ড. ইউনুসকে রাষ্ট্রপতি করে জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিগঠনের প্রস্তাব রাখেন।’
তিনি জানান, ‘গত ৩ আগস্ট শহীদ মিনার থেকে হাসিনা সরকার পতনের এক দফা ঘোষণায় জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বাস্তবায়নের রূপরেখা অন্তর্ভুক্ত করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে একটি ইশতেহারও লিখে দিয়েছিলেন খোমেনী ইহসান। দুঃখজনকভাবে সেই ইশতেহার প্রকাশ করা হয়নি। বরং সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার নামে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নামে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে অনাবশ্যক বিতর্ক, অনিশ্চয়তা ও আতংক তৈরি করা হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে খোমেনী ইহসানের আহ্বানে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসার বর্তমান শিক্ষার্থীরা ‘বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ’ নামে নতুন ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে ‘জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ’ পরিগঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি নাগরিক পরিসরে ‘জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ’ ও শ্রেণি পেশাভিত্তিক বিপ্লবী পরিষদসমূহও গড়ে তোলা হবে।’
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক বলেন, ‘জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিগঠন একটি ব্যাপকতর রাজনৈতিক প্রক্রিয়া যা সম্পন্ন করতে সমন্বিত সাংবিধানিক, আইনি, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করার বিকল্প নাই। এ জন্য নতুন সংবিধান প্রণয়নসহ রাষ্ট্র সংস্কার; রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন সাধন; শিক্ষা ও কর্মসংস্থান ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক পরিসরকে ফ্যাসিবাদী দল-সংগঠন-প্রতিষ্ঠান মুক্ত করে ও ফ্যাসিবাদী খুনি অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করে সর্বস্তরের জাতীয় সমঝোতা গড়ে তুলতে হবে।’
এ সময় সংগঠনটির নেতরা রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য বিভিন্ন দাবি উপস্থাপন করেন।
রাষ্ট্রপতি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রসঙ্গে তারা দাবি জানান, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তাকে অব্যহতি দেওয়ার আবেদন করে পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন; অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করবেন; রাষ্ট্রপতি পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সমাজের পুনর্গঠন সম্পন্ন করতে তিনি নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী হবেন; নতুন রাষ্ট্রপতি বিদ্যমান সংবিধান বাতিল ঘোষণা করবেন।
নতুন সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন করতে রাষ্ট্রপতি এক মাসের মধ্যে একটি সর্বদলীয় জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করবেন; রাষ্ট্রপতি বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ ভেঙে দিয়ে সকল দলমতের সমন্বয়ে দক্ষ যোগ্য মেধাবী দেশপ্রেমিক নাগরিকদের সমন্বয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করবেন; এ সরকারের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ দুই বছর; সরকারের মন্ত্রিপরিষদ একজন প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্ব দেবেন, যিনি দল ও মতাদর্শ নিরপেক্ষ হবেন, যার কথা ও আচরণ সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকদের বিশ্বাস ও আকাঙ্ক্ষাবিরোধী হতে পারবে না; সরকারের মন্ত্রীরা কেউ বর্ণবাদী, অপরাধী, দুর্নীতিবাজ, নারীবিরোধী, গণবিরোধী, ইসলামোফোব, সাম্প্রদায়িক, মাদকাসক্ত ও দুশ্চরিত্র প্রকৃতির হতে পারবেন না; অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রুটিন দায়িত্ব পালন করবে।
কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন চুক্তি করতে পারবে না। আক্রান্ত না হলে কোনো দেশের বিরুদ্ধে বা পক্ষে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে না এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রীরা পরবর্তী দুই মেয়াদে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি পাবেন না।
নতুন সংবিধান প্রণয়ন প্রসঙ্গে তারা জানান, জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদ গণতন্ত্র-মানবাধিকার-ন্যায়বিচার-এ তিন মূলনীতির আলোকে সকল বৈষম্য-অবিচার-জুলুমের অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের বিশ্বাস ও আকাঙ্ক্ষার উপযোগী সংবিধানের) খসড়া প্রণয়ন করবে; নতুন সংবিধানের আলোকে সকল প্রকার বৈষম্যপূর্ণ, নিবর্তনমূলক, ঔপনিবেশিক, বর্ণবাদী ও মানবাধিকার পরিপন্থী আইন বাতিল করা; সংবিধানে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার বলে স্বীকৃতি দেওয়া হবে এবং এসব অধিকার আইন দ্বারা বলবৎযোগ্য হবে; পরিষদ দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাসের মধ্যে নতুন সংবিধানের প্রাথমিক খসড়া প্রস্তাবনা প্রণয়ন করবে এবং পরের ছয় মাস নতুন সংবিধান নিয়ে জনগণ মতামত দিবে ও বিতর্ক করবে।
এরপর ছয় মাসের মধ্যে চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তাবনা প্রণয়ন সম্পন্ন করতে হবে। খসড়া সংবধানের ভিত্তিতে একবিংশ মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নতুন নির্বাচিত সরকারের কাছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। নির্বাচিত নতুন সরকার বিস্তারিত বিতর্ক শেষে নতুন সংবিধান সংসদে পাস করবে ও এটি আইনে পরিণত হবে।
এ ছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের বিদেশে চিকিৎসা, সমাজ, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার সংস্কারে বিভিন্ন দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।