মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

চিলির প্রাচীর টপকানোর চ্যালেঞ্জে ব্রাজিল

ঐতিহ্যে-গুণে-মানে ব্রাজিলের সঙ্গে কোনো তুলনাই চলে না চিলির। কিন্তু টুর্নামেন্টটা যখন কোপা আমেরিকা, বিশেষত হালের এই মহাদেশীয় আসরে চিলিকে হিসাবের মধ্যে না রেখে কোনো উপায়ই নেই। কোপার সর্বশেষ আসরে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হলেও এর আগের দুটো টুর্নামেন্টেই শিরোপাজয়ী দল চিলি। এমনি অবস্থায় রিও ডি জেনিরোর সান্তোস মাঠে সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে চিলির প্রাচীর টপকানোর চ্যালেঞ্জের সামনে বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তি ব্রাজিল।
শনিবার (৩ জুলাই ২০২১) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় ম্যাচটি শুরু হবে। অপরদিকে কোপার প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে পেরুর মুখোমুখি হবে প্যারাগুয়ে। শুক্রবার রাত ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে এ ম্যাচ।
নকআউট পর্বে চিলি যে কতটা ভয়ঙ্কর সেটা খুব ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পারেন আর্জেন্টিনা সমর্থকরা। কোপার ২০১৫ ও ২০১৬ এই দুটো আসরেই লিওনেল মেসিদের হারিয়ে শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছে চিলি। সেই শিরোপার স্বাদ পাওয়া দলটির বেশিরভাগ সদস্যই আছেন বর্তমান দলটিতেও। গোলরক্ষক ক্লুডিও ব্রাভো, ডিফেন্ডার উজেনিও মেনা, মরিসিও ইসলা, মিডফিল্ডার আরতুরো ভিদাল, আরাঙ্গুইজ, এদুয়ার্দো ভারগাসরা যে কোপায় নয়বারের শিরোপাধারী ব্রাজিলকে এতটুকু ছাড় দেবেন তা বলাই বাহুল্য। চিলি ভক্তদের জন্য আপাতত সুসংবাদ যে অ্যালেক্স সানচেজকে নিয়েই বড় পরীক্ষায় নামতে পারবে তাদের দল। কাফ মাসলের ইনজুরির জন্য গ্রুপপর্বে খেলতে পারেননি এই অ্যাটাকার। দলের সঙ্গে অনুশীলনেও যোগ দিয়েছেন এই চিলি গোল মেশিন।
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের মতোই এবারের কোপা মিশন শুরু করেছে ব্রাজিল। প্রথম ম্যাচে ভেনেজুয়েলাকে তারা হারায় ৩-০ ব্যবধানে। পরের ম্যাচে পেরুর বিপক্ষে নেইমারদের জয় ৪-০ গোলে। তৃতীয় ম্যাচে কলম্বিয়াকে তারা হারিয়েছে ২-১ ব্যবধানে। তবে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে ইকুয়েডর বাধা পেরোতে পারেনি ব্রাজিল। ম্যাচটি ড্র হয়েছে ১-১ গোলে। তবে এই ম্যাচে দলের সেরা তারকাদের অনেককেই বাইরে রাখেন ব্রাজিল কোচ তিতে। টানা তিন জয়ে গ্রুপসেরা আগেই নিশ্চিত হওয়াতে ম্যাচটিকে কিছুটা হালকা মেজাজে নেন ব্রাজিল কোচ। এই ম্যাচে নেইমার, থিয়াগো সিলভা, ক্যাসেমিরো, গ্যাব্রিয়েল জেসুসদের ছাড়াই খেলতে নামে সর্বশেষ কোপা বিজয়ীরা।
গ্রুপপর্বে খুব একটা রঙ ছড়াতে পারেনি চিলি। তবে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনার সঙ্গে পিছিয়ে পড়েও সমতায় ফেরার কৃতিত্ব দেখিয়েছে তারা। পরের খেলায় তারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল বলিভিয়াকে হারায় ১-০ ব্যবধানে। তৃতীয় ম্যাচে উরুগুয়ের সঙ্গে তারা ড্র করেছে ১-১ ব্যবধানে। গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে প্যারাগুয়ের কাছে দলটির হার ২-০ গোলে।
ব্রাজিল যেখানে গ্রুপসেরা হিসেবে শেষ আটে পৌঁছেছে সেখানে গ্রুপপর্বে চতুর্থ স্থান লাভ করেছে চিলি। তবে নকআউট পর্বে চিলি যে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এটা হিসাবের মধ্যেই রাখতে হচ্ছে ব্রাজিলকে। তাদের সহকারী কোচ সিজার সাম্পাইও। তার কথায়, চিলি সমীহ জাগানো এতটা দল। তাদের শক্তি ও দুর্বল জায়গাগুলো আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। চিলির বিপক্ষে ভালো ফল পেতে হলে রক্ষণভাগকে নিñিদ্র রাখতে হবে, এই অভিমত ব্রাজিল ডিফেন্স জেনারেল থিয়াগো সিলভার। বলেছেন, এবারের আসরে চিলি এখন পর্যন্ত বেশি গোল করতে পারেনি। তিন গোল করেছে তারা। তবে যখনই ফাঁকা জায়গা পায়, তখনই তারা গোলে শট নেয়। তাই আমরা তাদের বেশি একটা সুযোগ দিতে চাই না।’
ব্রাজিলকে পেছনে ফেলতে হলে নিজেদের সেরা ম্যাচটা খেলতে হবে বলে মনে করছেন দলটির কোচ মার্টিন লাসারতে। তার ভাষায়, স্বাগতিক দলের বিপক্ষে খেলাটা সবসময়ই কঠিন। আর এ মুহূর্তে ব্রাজিল দলটি আছে তাদের সেরা অবস্থায়। আর তাই আমাদের সেরা ম্যাচটাই খেলতে হবে। আমি মনে করি এটা আমাদের পক্ষে খুবই সম্ভব। আমরা মাঠে তাদেরকে অবশ্যই সমীহ করব। তবে তাদের ভুলের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টাও আমরা করব।’
ব্রাজিলের বিপক্ষে চিলির পারফরম্যান্স মোটেও উজ্জ্বল নয়। দুদলের সর্বশেষ ১৫ মোকাবিলায় ব্রাজিল জিতেছে ১২ বার। ২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ব্রাজিলকে একটি বারের জন্যও হারাতে পারেনি চিলি। দুদলের সর্বশেষ দেখায় ব্রাজিলের জয় ৩-০ ব্যবধানে। তবে বড় আসরে চিলি যে একটা ভিন্ন দল সেটা ব্রাজিল টের পেয়েছে ২০১৪ বিশ্বকাপে। ওই আসরে দু’দলের শেষ ষোলোর লড়াইয়ে পরাশক্তিদের কাঁদিয়ে ছেড়ে ছিল চিলি। নির্ধারিত সময়ের খেলা ছিল ১-১ ড্র। অতিরিক্ত সময়েও গোল করতে পারেনি কোনো দল। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। পেনাল্টি শুট আউটে ৩-২ ব্যবধানে জিতে পরের রাউন্ডের ছাড়পত্র পায় ব্রাজিল।
‘বি’ গ্রুপে ব্রাজিলের পেছনে থেকে দ্বিতীয় স্থান পেয়ে শেষ আটে জায়গা করে নিয়েছে পেরু। আর ‘এ’ গ্রুপে তৃতীয় স্থান পেয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে প্যারাগুয়ে। কোপায় দুদলই শিরোপা জিতেছে দুবার। পেরু এই আসরে সর্বশেষ শিরোপা জিতেছিল ১৯৭৫ সালে। আর প্যারাগুয়ে এই আসরে সর্বশেষ ট্রফি জিতেছিল ১৯৭৯ সালে। এই আসরে দুদলই সর্বশেষ সেমিফাইনালে উঠেছিল ২০১৫ সালে। ফাইনালে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ দুদলই মুখোমুখি হয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে। ম্যাচে প্যারাগুয়েকে ২-০ গোলে হারিয়ে তৃতীয় স্থান পায় পেরু।

সম্পর্কিত পোস্ট