সাংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব দেয়ার কথা জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম। দলটির চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেছেন, সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত আমাদের একগুচ্ছ প্রস্তাবনায় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনায়ন করা, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থার প্রবর্তন করা, সংবিধান সংশোধনে গণভোটকে বাধ্যতামূলক করা ইত্যাদি বিষয় থাকবে। তবে আমাদের সুষ্পষ্ট বক্তব্য হলো, এসব সংস্কারের প্রস্তাবনা কমিশন তৈরি করবে এবং পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ তা বাস্তবায়ন করবে।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বনানীস্থ চেয়ারম্যান কার্যালয়ে এনডিএম এর নীতিনির্ধারণ পরিষদের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, মহাসচিব মোমিনুল আমিন, উচ্চ পরিষদ সদস্য হুমায়ুন পারভেজ খান, ভাইস-চেয়ারম্যান ফারুক-উজ-জামান চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মো. জাহাঙ্গীর আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার শাহেদুল আজম, দফতর সম্পাদক জাবেদুর রহমান জনি।
ববি হাজ্জাজ বলেন, এনডিএম এর নীতিনির্ধারণী পরিষদ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান করা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠককে স্বাগত জানায়। একইসাথে আমরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অকুন্ঠ সমর্থন এবং সহযোগিতার ঘোষণা দেবার জন্য বাইডেন প্রশাসনের প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা মনে করি, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনের পর দেশকে একটি নতুন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পথে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র সংস্কার এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার প্রতিটি পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান সরকারের পাশে থাকবে।
এনডিএম এর নীতিনির্ধারণী পরিষদ দেশের পোষাক খাতে সৃষ্ট অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং শ্রম উপদেষ্টার সাথে এই খাত সংশ্লিষ্টদের বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে সবপক্ষ তা মেনে নিবে বলে আমরা মনে করি। দাবি পূরণ হওয়ায় মালিক এবং শ্রমিক উভয়ের স্বার্থ সুরক্ষায় পোষাক খাতের সব কারখানা সচল থাকবে বলে আমরা মনে করি। একইসাথে শ্রমিক ভাই-বোনদের উষ্কানি দিয়ে পরাজিত ফ্যাসিবাদের দোসররা যাতে কোন সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারেও সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, দলীয় নীতিনির্ধারণী পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত কমিশনসমূহের প্রধানদের সাথে দলের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। নির্বাচন সংক্রান্ত আমাদের বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে থাকছে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ নিয়ে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের করা আইন বাতিল করে গ্রহণযোগ্য সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি নিয়োগ করা, নির্বাচনী প্রচারণায় সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা, একাধিক দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা, প্রার্থীদের হলফনামা যাচাইয়ে স্বতন্ত্র সংস্থাকে ক্ষমতায়ন করা, আচরণবিধি পর্যবেক্ষণে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাসহ ম্যাজিষ্ট্রেট মোতায়েন করা ইত্যাদি।
এনডিএম চেয়ারম্যান বলেন, পুলিশ বাহিনীকে স্বতন্ত্র কমিশনের মাধ্যমে জবাবদিহিতার আওতায় আনার লক্ষ্যে আমরা প্রস্তাবনা তৈরি করছি। আমরা চাই, সরকারের আজ্ঞাবহ দলদাস বাহিনীতে পুলিশ বাহিনী যাতে পরিচালিত না হয় সেই লক্ষ্যে পুলিশের কোড অব কন্ডাক্টে পরিবর্তন আনতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুলিশ বাহিনীর জন্য আলাদা বিভাগ চালু করতে হবে যার প্রধান হবেন একজন দল নিরপেক্ষ পুলিশের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা এবং তার অধীনে আইজিপি থেকে পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা জবাবদিহিতার আওতায় আসবেন। আমাদের প্রস্তাবনায় আরও থাকবে, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট প্রধানের নিয়োগ এবং তাদের কার্যক্রম তদারকি স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন পুলিশ বিভাগের প্রধানের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।
তিনি বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রধান ভিত্তি হতে হবে জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার এবং জনবান্ধব সেবা নিশ্চিত করা। আমাদের প্রস্তাবনায় থাকছে, সরকারি সেবা গ্রহণে জনগণ যাতে কোন বৈষম্যের শিকার না হয় সেটা নিশ্চিত করতে সিভিল সার্ভিস আইনের প্রয়োজনীয় ধারা এবং বিধিমালা সংস্কার করতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় জনপ্রশাসনে নিয়োগ এবং পদোন্নতি রোধ করার জন্য সরকারি কর্ম কমিশনের সুপারিশকৃত প্রার্থীদের বাধ্যতামূলক বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে হবে। দল নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন “সিলেকশন বোর্ড” প্রার্থীদের নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল এবং প্রশিক্ষণের ফলাফল মূল্যায়ন করে চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য সুপারিশ করবে। সরকারি চাকুরিতে সব ধরণের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রথা বাতিল করতে হবে।
এনডিএম নীতিনির্ধারণী পরিষদ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র দেয়া বাংলাদেশীদের নিয়ে মানহানিকর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছে।
আগামী রোববার বিপ্লব এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে “ছাত্র-জনতার সংহতি সমাবেশ” আয়োজনের সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।