সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
গাজীপুরে আবারো বিভিন্ন দাবিতে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে সড়ক অবরোধ করেছেন।
শনিবার সকাল ৮টা থেকে মহানগরীর কোনাবাড়ীতে যমুনা ডেনিমস কর্মীরা ১৯ দফা দাবিতে এবং সদর উপজেলার মেম্বারবাড়ী এলাকায় সিলকন সুইং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা ১৮ দফা দাবিতে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এতে প্রায় ৫ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। পরে দুপুর ১টার দিকে কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নিলে শ্রমিকরা সড়ক ছাড়েন। এ ছাড়া সকাল ৯টা থেকে মহানগরীর দক্ষিণ সালনা পলাশটেক এলাকার এইচআর ওয়ান ফ্যাশন লিমিটেড এবং এইচআর ওয়ান এক্সেসরিজ কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
জানা যায়, কোনাবাড়ীতে যমুনা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান যমুনা ডেনিমস লিমিটিডে কারখানার উৎপাদন ফ্লোরে কর্মরত ২২৫ জন স্টাফ ডিস্ট্রিবিউটর, সুপারভাইজার, ইনচার্জ ১৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। শ্রমিকদের একটি অংশ সমর্থন জানিয়ে ওই বিক্ষোভে অংশ নেন। এ সময় তারা কোনাবাড়ী-কাশিমপুর সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে শ্রমিকরা সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করলে বেলা ১১টা থেকে যান চলাচল শুরু হয়।
যুমনা ডেনিমস লিমিটেডের কমপ্লায়েন্স ম্যানেজার সেলিম রেজা জানান, আন্দোলনকারীদের মধ্যে থেকে ৮-১০ জনকে কারখানার সভাকক্ষে এসে দাবিগুলো নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা প্রস্তাব না মেনে কারখানার প্রধান ফটক অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ অবস্থান করছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২-এর সহকারী পুলিশ সুপার (কোনাবাড়ী জোন) জাহাঙ্গীর আলম জানান, সকালে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কারখানায় প্রবেশ না করে প্রধান ফটকে ১৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এক পর্যায়ে তারা কোনাবাড়ী-কাশিমপুর সড়কে অবস্থান নেন।
অপরদিকে সদর উপজেলার বানিয়ারাচাল-ভবানীপুর মেম্বারবাড়ী এলাকায় সিলকন সুইং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা সকাল থেকেই কাজে যোগ না দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণসহ ১৯ দফা দাবিতে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় সড়কের উভয় পাশে প্রায় ৫ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। প্রায় ৪ ঘণ্টা পর দুপুর ১টার দিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নিলে শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যান।
বিক্ষোভকারী শ্রমিকরা জানান, উৎপাদন ফ্লোরে প্রায়ই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দুর্ব্যবহার ও হয়রানি করে থাকেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর আন্দোলন করে ওইসব স্টাফদেরকে অপসারণের দাবি জানালে কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছে বলে আশ^াস দিয়েছিল। কিন্তু মিথ্যা আশ^াস দিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রতারণা করেছে।
জয়দেবপুর থানার ওসি আবদুল হালিম জানান, সকাল থেকেই শ্রমিকরা কাজে যোগদান না করে ১৯ দফা দাবিতে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাদের দাবি মেনে নিলে শ্রমিকরা সড়ক থেকে সড়ে যান।
এ ছাড়া সকাল ৯টা থেকে মহানগরীর দক্ষিণ সালনা পলাশটেক এলাকায় শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা কারখানা খুলে দেওয়া এবং ৩ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে এইচআরওয়ান ফ্যাশন লিমিটেড এবং এইচআরওয়ান এক্সেসরিজ কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। পরে শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের বোঝালে তারা মহাসড়ক থেকে সড়ে গিয়ে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
বিক্ষোভকারী শ্রমিকরা জানান, ৩ মাসের বকেয়া বেতন না দিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে গেটে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণার নোটিস টানিয়ে দেয়। সকালে কাজে যোগ দিতে এসে দেখতে পান গেটে বন্ধের নোটিস। গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক ফারুক বলেন, শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করার খবরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের বোঝালে তারা সড়ক ছেড়ে কারখানার সামনে অবস্থান নেন।
আশুলিয়ায় বন্ধ ও ছুটি ১৬ কারখানা, কয়েকটিতে বিক্ষোভ
এদিকে আশুলিয়ায় ১৬টি কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কয়েকটি বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া ও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। তবে বাকি সব কারখানায় উৎপাদন স্বাভাবিক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শনিবার সকাল ৮টার দিকে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের জিরাবো এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন লুসাকা কারখানার শ্রমিকরা। পরে তাদের সঙ্গে মণ্ডল গ্রুপ ও ম্যাংগো টেক্সের শ্রমিকরা যোগ দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
শ্রমিকরা জানান, গতকাল বিভিন্ন দাবির মুখে লুসাকা কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। গতকালও বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে তারা কারখানার সামনে অবস্থান করেন। পরে তারা ওই এলাকার কয়েকটি কারখানার সামনে গেলে ৪টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া বেতন বৃদ্ধির দাবিতে মণ্ডল গ্রুপের শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন।
শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকাল থেকে ডিইপিজেডসহ শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজে যোগ দেন শ্রমিকরা। তবে বকেয়া বেতনসহ আরও কিছু সমস্যার কারণে শনিবারও ১৬টি কারখানার উৎপাদন বন্ধ ছিল। যার মধ্যে ১০টি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। বাকি ৬টি কারখানাতে রয়েছে সাধারণ ছুটি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গোটা শিল্পাঞ্চলে নিয়োজিত আছেন র‌্যাব পুলিশ, বিজিবিসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, শনিবারও ১০টি কারখানা বন্ধ ছিল। এ ছাড়া সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে ৬টি কারখানায়।

সম্পর্কিত পোস্ট