পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবার ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলি খামেনি জুমার নামাজে খুতবা দিয়েছেন। খুতবায় হাজার হাজার মানুষের সামনে সমসাময়িক বিষয়ে বিশদ বক্তব্য দেন তিনি। বলেন, গত বছরের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের হামলা ‘সম্পূর্ণভাবে’ একটি সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। ফিলিস্তিনি-লেবানিজসহ সবারই আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অধিকার রয়েছে। তিনি বলেন অচিরেই ইসরাইল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। খবর তেহরান টাইমসের।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি লিখেছে, ইসরাইলের অভ্যন্তরে তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রশংসা করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি এই হামলাকে ‘আইনসম্মত’ হামলা বলেও অভিহিত করেছেন। খামেনি বলেছেন, ইসরাইল যে ‘আশ্চর্য অপরাধ’ করেছে তার বিরুদ্ধে ওই হামলা তেল আবিবের জন্য ‘ন্যূনতম শাস্তি’। ইসরাইলকে মধ্যপ্রাচ্যের ‘রক্তপিপাসু বা ভ্যাম্পায়ার’ এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ‘হন্যে কুকুর’ বলে অভিহিত করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় এই নেতা।
তিনি বলেছেন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘শান্তি ও দৃঢ়তার’ সঙ্গে যে কোনো দায়িত্ব পালন করবে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। ইসরাইলের ব্যাপারে দ্বিতীয়বার ভাববে না তেহরান এমন হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন খামেনি।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরা লিখেছে, উপস্থিত জনতার উদ্দেশে খামেনি বলেন, আমাদের শত্রু বিভাজন ও রাষ্ট্রদ্রোহের বীজ বপন করার কৌশল হাতে নিয়েছে। তারা চায় মুসলমানরা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ুক। কিন্তু তারা ফিলিস্তিনি, লেবানিজ, মিসরীয় ও ইরাকি- সবারই শত্রু তারা। তারা ইয়েমেন ও সিরিয়ার মানুষেরও শত্রু। তিনি বলেন, আমাদের শত্রু এক ও অভিন্ন। খামেনি আরও বলেন, প্রতিটি দেশের শত্রুর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার অধিকার আছে। মুসলিম দেশগুলোকে ‘তাদের অভিন্ন শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
স্থানীয় গণমাধ্যম তেহরান টাইমস লিখেছে, ইসরাইলি সামরিক সাইট এবং গোয়েন্দা দফতর লক্ষ্য করে প্রায় ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের তিন দিন পর সর্বোচ্চ নেতা জনসমক্ষে এ বিবৃতি দিলেন। এই অঞ্চলে গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি নৃশংসতার উল্লেখ করে খামেনি বলেন, ইরানি জাতির এবং ফিলিস্তিনি, লেবানিজ, ইরাকি, মিসরীয়, সিরিয়া এবং ইয়েমেনি জাতির একই শত্রু। মুসলিম দেশগুলোকে যৌথভাবে ইহুদিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে একটি ‘বিশেষ’ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
খামেনি বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের সামরিক পদক্ষেপ ‘সম্পূর্ণভাবে আইনি এবং বৈধ’ ছিল। আগ্রাসী যে কারোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইরান ‘তাড়াহুড়ো কিংবা দ্বিধা করবে না’। ‘ইসলামের প্রতিরক্ষা ডিক্রি, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে ‘রক্তপিপাসু’ ইহুদিবাদীদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর পদক্ষেপ সম্পূর্ণ বৈধ এবং বৈধই ছিল। ‘কোনো গোষ্ঠী বা যে কোনো সংস্থা’ দ্বারা ইসারইলের যে কোনো ক্ষতি সমগ্র অঞ্চলের এবং ‘মানবতার’ জন্য সেবার তুল্য।
আয়াতুল্লাহ খামেনি আরও বলেন, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘আল-আকসা স্ট্রম’ সাংকেতিক নামে হামাসের সামরিক অভিযান ছিল একটি ‘বৈধ’ পদক্ষেপ। এ সময়ই তিনি ইসরাইলে ইরানের শেষ দুটি সামরিক অভিযানেরও প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই দুটি অপারেশন প্রমাণ করেছে যে-যখনই প্রয়োজন তখনই ইরান ইহুদিবাদী শাসকদের মোকাবিলা করতে পারে। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন, ইসরাইলের জায়নবাদী শাসন ‘অবশেষে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা এটি করব।’
সাইয়েদ হাসান নাসরাল্লাহর চেতনা মুসলমানদের চিরকাল অনুপ্রাণিত করবে বলেও উল্লেখ করেন খামেনি। আরবিতে দেওয়া বক্তব্যে সমবেতদের তিনি বলেন, ইসরাইল একটি ‘ক্ষতিকারক, শিকড়হীন, কৃত্রিম এবং অস্থিতিশীল’ শাসনব্যবস্থা যাকে আমেরিকার সমর্থনে জিইয়ে রাখা হয়। তবে আল্লাহর ইচ্ছায় এর স্থায়িত্ব দীর্ঘ হবে না। আজ ইহুদিবাদী সন্ত্রাসী চক্রও এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে তারা হামাস এবং হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে (যুদ্ধ) কখনই জিততে পারবে না। প্রতিরোধ গড়ে তোলা বিভিন্ন গোষ্ঠী তথা প্রতিরোধের অক্ষ এই নির্বিচার গণহত্যার মুখেও পিছপা হবে না বরং ‘প্রতিরোধই বিজয়ী হবে’। ইরান সে লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান শক্তিশালী রূপে ও ধীরস্থিরভাবে এই বিষয়ে যে কোনো দায়িত্ব পালন করবে। খামেনি জোর দিয়ে বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে দ্বিধাও করব না আবার তাড়াহুড়োও করব না।
তেহরানের গ্র্যান্ড মোসাল্লা মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ান খামেনি। গত পাঁচ বছরের মধ্যে তিনি প্রথমবারের মতো জুমার নামাজের খুতবা দিলেন। এর আগে ২০২০ সালে মার্কিন হামলায় বিপ্লবী গার্ডের জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করার পর খামেনি শেষবার জুমার খুতবা দিয়েছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তেহরানের গ্রান্ড মসজিদের জুমার খুতবা খামেনির দেওয়ার কথা থাকলেও জরুরি পরিস্থিতি না হলে তা থেকে তিনি বিরত থাকেন। তার পরিবর্তে সাধারণত অন্য কেউ জুমার নামাজের ইমামতি করে থাকেন।