‘ভারতীয় মিডিয়ায় ৫ আগস্টের গণ অভ্যুত্থানকে ইসলামিক ক্যু হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশে জঙ্গি অভ্যুত্থান ঘটেছে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙাকে ইসলামিক এজেন্ডা হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর গণহত্যা চলছে। আর জনগণের গণঅভ্যুত্থান এই মিডিয়াগুলো মেনে নিতে পারছে না। বাংলাদেশে জনগণের কোনো বিপ্লব হলেও সেটা কখনো স্বীকার করবে না। বরং সেটাকে তারা ভুয়া বিপ্লব বলবে।’
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে ‘জুলাই গণপরিসর’ ব্যানারে এই পর্যালোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ‘ভারতীয় মিডিয়ায় জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরিবেশনার ধরন: একটি পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
আলোচনা সভার শুরুতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সারোয়ার তুষার। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানকে ইসলামপন্থী বা জামায়াতে ইসলামির আন্দোলন হিসেবে হাজির করা হচ্ছে। হাসিনার পতনের পর এবার হিন্দু তথা সংখ্যালঘুরা বিপদে পড়ে যাবেন এমন যুক্তি উপস্থাপন করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ না থাকলে হিন্দু জনগোষ্ঠী খতরনাক হালতে পড়ে যাবে, বা ইতিমধ্যেই পড়ে গেছে এমন বয়ান ভারতের মিডিয়া পাড়াতে খুব জোরেশোরে চলছে। এই বয়ানের ভেতরে যেমন একদিকে বাংলাদেশকে একটি মৌলবাদী দেশ হিসেবে তুলে ধরা হয়, তেমনি আওয়ামী লীগকে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ত্রাণকর্তা বা বন্ধু রূপে তুলে ধরা হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব জাহেদ উর রহমান বলেন, বাংলাদেশের হিন্দুরা ভয়ংকর রকমের সংকটে আছে, ভারতীয় মিডিয়াগুলো এধরনের ন্যারেটিভ তৈরী করতে চায়। তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ বিষয়ে। আমরা যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে আছি।
ভারতের সফট পাওয়ারকে যেন আন্ডারমাইন্ড না করি। ভারতের সিভিল সোসাইটি জনগণের সাথে আমাদের সংযোগ বাড়াতে হবে। আমাদের পাল্টা ন্যারেটিভ তৈরীতে কাজ করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. খোরশেদ আলম বলেন, ভারত রাষ্ট্রের নীতি, আওয়ামী নীতি ও ভারতীয় মিডিয়ার নীতি এক স্বর সুরে কথা বলছে। আমাদেরকে কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরী করতে হবে, যেটা হবে বাংলাদেশি ন্যারেটিভ। সমালোচনা করলে কোনো কাজ হবে না।
সব বিষয়ে বাংলাদেশি ন্যারেটিভ দিয়ে সামাল দিতে হবে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গণমাধ্যম তাত্ত্বিক সুমন রহমান বলেন, ভারত ও পাকিস্তান যখন ক্রিকেট খেলে, তখন কোনো বাংলাদেশি পাকিস্তানকে সমর্থন করলে ভারতীয়রা মন্তব্য করে- ‘তোমাদের একটা দেশ দিলাম। তারপরও তোমারা এত অকৃতজ্ঞ।’ আমি মনে করি এখানে ভারতের মিডিয়াগুলোও এই ধারণা পোষণ করে। তাদেরকে এই চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
এএফপির ফ্যাক্টচেকার কদরুদ্দিন শিশির বলেন, ভারতীয় মিডিয়ায় মোটা দাগে ডিসইনফরমেটিভ। যেমন- এই আন্দোলনটা ইসলামিস্টদের। এমন ন্যারেটিভ প্রচার করা হচ্ছে। এগুলো সমাধানের উপায় আছে। ভারতের সাংবাদিকদের সাথে আমাদের ভালো যোগাযোগ নাই। যেটা আছে, সেটা হলো আওয়ামী যোগাযোগ। আমাদের এই জায়গাগুলোতে কাজ করতে হবে।