মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

চাঁদপুর বড়স্টেশন মোলহেড পর্যটনকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ

  • চাঁদপুর প্রতিনিধি

পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়া এ তিন নদীর সংঘমস্থান মেঘনা মোহনা। নদীগুলো তিনদিক থেকে প্রবাহিত হয়ে মিশে যাওয়ায় সেখানে সৃষ্টি হয় পানির বিশাল ঘূর্ণিশ্রোত। এই দৃশ্যটি দেখতে তিন নদীর মোহনা চাঁদপুর বড়স্টেশন মোলহেডে দর্শনার্থীরা ভিড় জমান। মহামারি করোনা বিপর্যয়ের কারণে দীর্ঘদিন পর খুলে দিওয়া হয়েছে চাঁদপুরের একমাত্র পর্যটন কেন্দ্র বড়স্টেশন মোলহেড।

চারপাশ থেকে তীব্র শ্রোত প্রবাহিত হওয়ায় ভয়ঙ্কর ওই ঘূর্ণিপাকে কিছু পড়লে তার আর হদিস মেলে না। এমনকি বড় বড় যাত্রীবাহী লঞ্চও তলিয়ে গেছে এখানে। শুধু তাই নয়, প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে অনেক মালবাহী কার্গো তীব্র শ্রোতে ডুবে গেছে। যেগুলোর সন্ধান আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। চাঁদপুরের ত্রিনদীর সঙ্গমস্থলটিকে অনেকে ট্রায়াঙ্গেল নামেই চিনে। বর্ষার নদীর পানি বৃদ্ধিতে তিন নদীর সঙ্গমস্থলে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়।

চাঁদপুরে মেঘনা নদীর সীমানা ৩৬০ দশমিক ১১ কিলোমিটার। এর মধ্যে এই নদীগুলো তিন দিক থেকে প্রবাহীত হয়ে মিশে যাওয়ায় এখানে সর্বক্ষন পানির এক বিশাল ঘূর্ণিগর্তের সৃষ্টি হয়। এই ঘূর্নিগর্তই এলাকাটিকে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও জাহাজ চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চাঁদপুর বড়স্টেশন মোলহেডে ২৪ ঘন্টাই প্রবল ঘূর্নিশ্রোত বইতে থাকে। প্রতি সপ্তাহে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে এই স্থানে। মোহনায় তীব্রশ্রোত থাকায় কখনোই সম্ভব হয়ে উঠেনি নৌযান উদ্ধার করা।

বিভিন্ন সূত্রে থেকে জানা যায়, বড়স্টেশন মোলহেডে এমভি শাহজালাল, মদিনা, দিনার ও নাসরিন-১ লঞ্চ ডুবে যায়। সবগুলো লঞ্চেই প্রচুর যাত্রী ছিলো। কিন্তু অতিরিক্ত শ্রোত থাকার কারনে অধিকাংশ যাত্রী মৃত্যু বরণ করে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে এমভি নাছির লঞ্চ। যার প্রায় ৯০ ভাগ যাত্রীই মারা গেছেন। এ পর্যন্ত এখানে ডুবে যাওয়া কোন লঞ্চের সন্ধ্যান পায়নি। এছাড়া প্রতিবছর বিভিন্ন সময়ে মাল বোজাই কার্গোগুলোরও হদিস মিলেনি।

প্যানেল মেয়র ফরিদা ইলিয়াস বলেন, বড়স্টেশন মোলহেডে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষ সময় কাটায়। এখানকার পরিবেশ খুবই সুন্দর। বছরের এই সময়ে শুধু এখানে ঘূর্ণিশ্রোত সৃষ্টি হয়। শ্রোতের কারনে শহররক্ষা বাঁধও ঝুঁকির মধ্যে থাকে। বিপরিত পাশের ডুবচর কেটে ফেললে শ্রোতের গতিপথ পরিবর্তন হবে। তখন এখানে ঝুঁকি কমে আসবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।

চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড উপপরিচালক এস এম রেফাত জামিল বলেন, মোলহেডের ঘূর্ণিশ্রোত নিয়ে আমাদের বিশষজ্ঞরা কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া চর কাটার বিষয়ে মন্ত্রনালয়ে আবেদন করা হয়েছে। এখনো আমরা অনুমোদন পাইনি। বিশষজ্ঞদের গবেষনা অনুযায়ী চরকাটা হবে, যাতে এখনে শ্রোত করে যায়। আশা করি আমাদের প্লান অনুযায়ী কাজ হলে এই স্থানটি ঝুঁকিমুক্ত হবে।

চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মো. কায়সারুল ইসলাম বলেন, আমরা বর্ষার প্রথম মৌসুমেই মোহনায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থান বিজ্ঞপ্তি জারি করি। প্রয়োজন ছাড়া যাতে এই স্থানে কোন ট্রলার, স্পিডবোট, কার্গো জাহাজ চলাচল না করে। যাত্রীবাহী লঞ্চ ও মালবাহী কার্গোগুলোকে যতটুকু সম্ভব ঝুঁকি এড়িয়ে চলাচল করতে বলা হয়েছে। পর্যটকরা যাতে এই সময়ে নদীতে না নামে তার জন্য মাইকিং করা হয়। এছাড়া নির্দেশনা মেনে চলতে বিআইডব্লিউটিএ, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ নদীতে টহল দিয়ে থাকে।

সম্পর্কিত পোস্ট