- কক্সবাজার প্রতিনিধ
কক্সবাজারের টেকনাফে আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ১৫ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চান বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চলমান বিচার প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্ত আদেশ দেখে যেতে চান তিনি।
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) রাত পৌনে ৮টার দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমার আর সিফাতের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এ মামলা এখনো চলমান। প্রকৃত ঘটনা আদালতের সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়াও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আমাকে জেরা করেছে।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, মামলায় মোট সাক্ষী ৮৩ জন। সেখান থেকে তিনদিনে ১৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। বাকিদের ধাপে ধাপে সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে। সোমবার প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করার পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেছেন। সিনহার সহযোগী শাহেদুল ইসলাম সিফাতের জবানবন্দি চলমান রয়েছে। হয়তো কালকে শেষ হবে। তারপর জেরা শুরু হবে।
এদিকে প্রথম সাক্ষী ও মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসকে তিন ঘণ্টা জেরা করেছেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত। আদালত চত্বরে তিনি দাবি করেন, তদন্ত সংস্থার দেওয়া অভিযোগপত্রের সঙ্গে প্রথম সাক্ষী ও মামলার বাদীর বক্তব্যের কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না। তারই প্রেক্ষিতে আদালতে উপস্থাপন করেছি এ মামলাটি পরিকল্পিত, ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলামকে (সিফাত) পুলিশ আটক করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার অপর দুই সফর সঙ্গী শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করে। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এই দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান।
সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।
আসামিদের মধ্যে পুলিশের ৯ সদস্য রয়েছেন। তারা হলেন, বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুল করিম, রুবেল শর্মা, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সাগর দেব নাথ।
অপর আসামিরা হলেন- আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য যথাক্রমে এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
গ্রেফতারদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এর আগে আসামিদের তিন দফায় ১২ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।