মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

নাম প্রকাশের আগে সম্মতি নেওয়ার সুপারিশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রপতির কাছে চূড়ান্ত ১০ জনের নাম জমার আগে প্রস্তাবিতদের সম্মতি নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সার্চ কমিটিকে। সার্চ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এই পরামর্শ দেওয়া হয়। এদিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে আজকের বৈঠকের পর আগামীকাল বুধবার বৈঠকে বসবে সার্স কমিটি। সেখানে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে আসা নামের তালিকা যাচাই-বাছাই করবে। এরপর দ্রুতই ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করবে এই কমিটি।

মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২) সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকের এই তথ্য জানান। এর আগে সার্চ কমিটি চারজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের সঙ্গে বৈঠক করে। আটজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আজকের বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত অংশ নেন চারজন। তারা হলেন: ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজ, ইংরেজি ডেইলি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সম্পাদক ইনাম আহমেদ ও বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম।

আমন্ত্রণ পেয়েও বৈঠকে আসেননি নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবীর, মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আগামীকাল (বুধবার) বিকাল ৪টায় সার্চ কমিটি বৈঠকে বসবে। বৈঠক থেকে নাম বাছাইয়ের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই সার্চ কমিটি তাদের বিবেচনায় যোগ্য নামগুলো চূড়ান্ত করবে। আজকের (মঙ্গলবার) বৈঠকে সে বিষয়টি নিয়েই আলোচনা হয়েছে।’

সার্চ কমিটির কাছে আসা ৩২২ জনের নামের তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতির কাছে চূড়ান্ত সুপারিশ করার সময় এর বাইরে থেকেও কমিটি নাম নিতে পারবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

ওয়েবসাইটে প্রকাশ হওয়া তালিকা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘সার্চ কমিটির কাছে বিভিন্ন দল, সংগঠন, সুশীল সমাজ ও ব্যক্তি নাম প্রস্তাব করেছে। সেই নামগুলো আমরা প্রকাশ করেছি। এখানে যারা নাম জমা দিয়েছে, তারা কোনো অনুমতি নিয়েছে কি না, সেটি আমাদের দেখার বিষয় নয়। পরবর্তী সময়ে অনুমতির কোনো বিষয় থাকলে আমরা সেটি নিয়ে ভাবব।’

বৈঠক থেকে বেরিয়ে মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, “যোগ্যতার বিবেচনার নিরিখে একজন নারী ও একজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি থাকা উচিৎ (ইসিতে)। বিশেষ পেশার প্রাধান্য না দিয়ে সব পেশার ব্যক্তিদের নিয়ে ভারসাম্যমূলক প্রতিনিধিত্ব রাখার জন্যে আমরা বলেছি।”

যাদের নামের প্রস্তাব এসেছে, তাদের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়ার জন্য প্রস্তাব করেন তারা। বুলবুল বলেন,  “এরা সুবিধার জন্যে রাজনৈতিক বোল পাল্টিয়েছেন কিনা, আর্থিক কোনো কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ছিল কি না, এসব দেখা দরকার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন এমন যোগ্যতর প্রতিনিধিদের যেন রাখা হয়…যোগ্যতর মানুষ নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন হলে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ভালো নির্বাচন করা সম্ভব।”

তিন শতাধিক প্রস্তাবিত ব্যক্তির নামের তালিকা প্রকাশ ঠিক হয়নি বলে মত দেন বুলবুল। কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রকাশিত তালিকার মধ্যে অনেকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা জানেনও না কে তাদের নাম প্রস্তাব করেছেন। তালিকায় নাম থাকায় খুশি হয়েছেন; কিন্তু কোনো কারণে চূড়ান্তভাবে তারা বিবেচিত না হন, তখন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়বেন। কারও মতামত না নিয়ে তাদের নাম তালিকায় প্রকাশ করা মনে হয় ঠিক হয়নি।”

বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, “আমরা বলেছি-গ্রহণযোগ্যতা একটি বড় বিষয়। সার্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য হয়, এমন নাম যেন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করেন, যাতে কোনো বিতর্ক না হয়। উনারা বলেছেন, আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেরকম নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবেন।”

প্রস্তাবকদের নাম প্রকাশ না করার সুপারিশের পাশাপাশি সম্মতি নিয়ে চূড়ান্ত ১০ জনের নাম প্রকাশের পক্ষে মত দেন এই সাংবাদিকরা।

নঈম নিজাম বলেন, “আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মানুষের আগ্রহ বেশি, যারা প্রত্যাশা পূরণ করবেন, নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখবেন, তাদের নাম জনসম্মুখে আসতেই পারে (চূড়ান্ত প্রস্তাবিত ১০ জন প্রকাশ)। সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের কনসেন্ট নিতে হবে, এ বিষয়ে সার্চ কমিটিও একমত হয়েছে। সেই ১০ জনের নাম তাদের মতামতের ভিত্তিতে প্রকাশিত হোক।”

বুলবুলও যোগ করেন, “আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে-চূড়ান্ত বিবেচনায় যদি কারও নাম প্রকাশ করতে হয়, তাদের যেন মতামত নেওয়া হয়।”

সম্পর্কিত পোস্ট