মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে একমত: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার বিষয়ে একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম সৌজন্য সাক্ষাতে আসেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা উভয়ে আমাদের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করার বিষয়ে একমত হয়েছি এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করব বলে আমরা আলোচনা করেছি। মার্কিন রাষ্ট্রদূত নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্যে, সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করার জন্য আলোচনা করেছি। বাণিজ্য আর বিস্তৃত করার জন্য আমেরিকান বিনিয়োগের বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করব বলে আমরা আলোচনা করেছি।

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের নানা বিষয়ে সম্পর্ক আছে। আমরা জঙ্গি দমনে উগ্রবাদ দমন মোকাবিলা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। সেটাকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে ভবিষ্যতে কাজ করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছি।

তিনি বলেন, নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পর্যবেক্ষণ করতে এসেছে সে বিষয়টাও আলোচনা করেছি। বাংলাদেশে একটি ভালো নির্বাচন হয়েছে। এ সমস্ত বিষয় আলোচনা হয়েছে।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ আলোচনায় এসেছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা করেছি। রোহিঙ্গাদের ফেরাতে সব সময় তাদের সহযোগিতা চেয়ে এসেছি আজকে সেটি আবারও পুনব্যক্ত করেছি। সেই লক্ষ্যে আমরা একযোগে কাজ করব বলে একমত হয়েছি।

সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচন প্রসঙ্গে কার দিক থেকে তোলা হয়েছে এমন প্রশ্ন রাখা হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে নানা দেশের নানা মত ছিল। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তারা নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। আমরা একযোগে আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। এ ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি এবং অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।

হাছান মাহমুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিজে থেকে নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্নের অবতারণা করেননি। বরং আমি তাদের দেশ থেকে তো পর্যবেক্ষক আসছে সেজন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। তিনি নিজে থেকে এ বিষয়ে (নির্বাচন প্রসঙ্গ) কোনো অবতারণা করেননি বা প্রশ্ন তোলেনি। আমি নিজে থেকে থেকে বলেছি, ভালো একটা নির্বাচন হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপির নৈরাজ্য, অগ্নি-সন্ত্রাসের কথা এসেছে। ৫ তারিখে তারা পেট্রোল বোমা জ্বালিয়ে একটি পরিবারকে মেরেছে, বহু মানুষ মেরেছে, ট্রেন জ্বালিয়ে দিয়েছে। আর ধারাবাহিকভাবে কাজগুলো করছে এ বিষয়টা অবতারণা করতে গিয়ে এটা (নির্বাচন প্রসঙ্গ) এসেছে, তিনি নিজে থেকে এ বিষয়টা অবতারণা করেননি।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা এবং সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা-জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সমুদ্রে তেল অনুসন্ধান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের সমুদ্রে প্রচুর তেল আছে সেটা আমেরিকান একটি কোম্পানি অনুসন্ধান করেছে। এটি উত্তোলন করতে পারলে আমাদের দেশ অর্থনৈতিক উপকৃত হবে সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা কিছুটা আছে। সেটা নিয়েও আলোচনা করেছি।

র‌্যাবেব নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, সরকার এ বিষয়ে কাজ করছে।

নিষেধাজ্ঞা বা পশ্চিমা অস্বস্তি কাটল কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা উভয় দেশ আমাদের সম্পর্কটাকে আরও ঘনিষ্ঠ করার লক্ষ্যে এবং আমাদের সরকার যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আরও একযোগে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা করেছি।

এর আগে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি সংবাদিকদের বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্গে প্রথম বৈঠকটি খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিস্তারিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের সম্পর্কে নতুন অংশীদারিত্ব সম্পর্কের চুক্তি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি যা খুব দ্রুতই সম্পন্ন হবে। এই সময়ে চলমান বৈশ্বিক উত্তেজনা যেমন রাশিয়ায় ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা এগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি এখান থেকে কিভাবে উত্তরণ ঘটানো যায়।

ইউক্রেন ইস্যু ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছি। আসলে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়গুলো দীর্ঘ মেয়াদে কিভাবে আরো এগিয়ে নেয়া যায় এসব বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি, বৈঠকটি খুব ভালো ফলপ্রসূ হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায়।

এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, আগামী পাঁচ বছরে আমাদের দুই পক্ষের সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে। এরই মধ্যে আমাদের সম্পর্ক উন্নয়ন অংশীদারিত্ব থেকে রাজনৈতিক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে নতুন অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় কাজ চলছে। এর আগে আমরা রাজনৈতিক সংলাপ করেছি। সামনের দিনগুলোতেও উভয়পক্ষ নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলব।

নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, আজকের বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে আলাপ হয়নি। আমরা নির্বাচনের পর আমাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। আজকের বৈঠকে আমরা আলাপ করেছি কিভাবে সামনের দিনগুলোতে এগিয়ে যাব।

সামনের দিনগুলোতে আমরা একসঙ্গে কাজ করব এই মুহূর্তে আমাদের অনেকগুলো অগ্রাধিকার প্রকল্প রয়েছে। যার মধ্যে গ্লোবাল গেইটে প্রকল্প রোহিঙ্গা সংকট ইত্যাদি। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে অভিবাসন সংক্রান্ত সকল বিষয় আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করবো।

সম্পর্কিত পোস্ট