জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের নেতৃত্বে আলাদা জোটের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে পার্টি থেকে বহিস্কৃত নেতারা।
তারা গত কয়েকদিনে একাধিক বৈঠক করেছেন রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীদের সঙ্গে। তাদের এখন মূল লক্ষ্য- যারা গেল নির্বাচনসহ নানা সময়ে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপায় অবমূল্যায়িত হয়েছেন তাদেরকে রওশন বলয়ে ভেড়ানো।
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর জাপায় অস্থিরতা দেখা দেয়। নেতা-কর্মীদের একটি অংশ জাপার চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে দলের বনানীর কার্যায়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। ভোটে ভরাডুবির জন্য এই দুই নেতাকে দায়ী করেন। এর জেরে দুই দফায় দলের চার নেতাকে দলীয় সব পদ–পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
জাপার সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় পিস বাংলাকে বলেন, একটু অপেক্ষা করুন।আগামী দুই এক দিনের মধ্যে রওশন এরশাদের (ম্যাডামের) নেতৃত্বে আমরা আলাদা জোটের ঘোষণা দিব। সেখানে ম্যাডাম প্রধান ভূমিকায় থাকবেন। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। পার্টির নাম অবশ্যবই জাপা হবে। কারণ সবাই তো জাপার নেতাকর্মী।
তিনি বলেন, এই প্রথম ছয় শতাধিক নেতাকর্মী এক যোগে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়ে দল ত্যাগ করেছে। সেচ্ছায় সবাই পদত্যাগ করেছে। এর কারণ একটাই! পার্টিকে গুটি কয়েকজন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বানিয়েছে। এখন জিএম কাদেরের লোকজন অবান্তর বলছে। তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
জাপার সাবেক আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সফিকুল ইসলাম সেন্টু পিস বাংলাকে বলেন, আমরা রাজনীতির মানুষ। রাজনীতি তো করবই। তবে জি এম কাদের ও মুজিবুল হকের নেতৃত্বে দল করব না, এটা আমাদের সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, আমরা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করব। আমরা আলোচনা করছি। অনেক বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা এখন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তারা ধীরেধীরে মুখ খুলছেন। নানা সময়ে পার্টির স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হয়ে ইতোমধ্যে ৬৬৮ বলে গণপদত্যাগ করেছেন।
এ বিষয়ে রওশন এরশাদ পিস বাংলাকে জানান, তিনি সব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তার সঙ্গে বহিস্কৃত নেতাকর্মীদের কথাবর্তা হচ্ছে।তারা তাকে ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। বহিস্কৃত নেতাকর্মীদের ত্যাগ ও শ্রম রয়েছে উল্লেখ করে তিনি সবাইকে পার্টিতে ফিরিয়ে নেওয়ার আহবানও জানান।
তবে এসবে গুরুত্ব দিচ্ছে না জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপা। ইতিমধ্যে তারা ঢাকা মহানগর উত্তরে নতুন কমিটি গঠন করেছে এবং বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান জারি রেখেছে।
এখন এসব বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি রওশন এরশাদের অনুসারি বলে পরিচিত বহিস্কৃত নেতা ফিরোজ রশীদ। এই নেতা বলেন, আমি এখন পার্টির কেউ নই। পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোন কিছু বলতে পারব না। আমি নিজের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত আছি।
রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে দ্বাদশ নির্বাচনের শুরু থেকে জাপাতে বিভক্তি দেখা দেয়। এক পর্যায়ে নির্বাচন থেকে সরে যান গত সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও তার ছেলে রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদও। সাদ যে আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন সেখানেই পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের সংসদ সদস্য হয়েছেন।
শেষ পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মাত্র ১১টি আসন পায়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা ২৬ আসনের ১৫টিতে হেরে যায় লাঙ্গলের প্রার্থীরা। তারা কেবল হেরেই যাননি, অনেক প্রার্থী জামানতও হারান।