মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

মোহাম্মদপুরে ডায়মন্ড ও দে ধাক্কা কিশোর গ্যাং দিয়ে জুলফিকারের অপরাধ সামরাজ্য

রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও এর আশপাশের এলাকায় ডায়মন্ড ও দে ধাক্কা নামের দুটি কিশোরগ্যাং ব্যবহার করে নানা অপরাধের সামরাজ্য গড়ে তুলেছেন জুলফিকার আলী ও তার সহযোগিরা।

শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিতে র‍্যাব-৩ এর প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-৩ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গতকাল শুক্রবার মোহাম্মদপুরের হাউজিং সোসাইটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচজনকে দেশি-বিদেশি অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। গ্রেফতারকৃতরা হলো- চক্রের অন্যতম হোতা মো. জুলফিকার আলী (৩৭) এবং তার অন্যতম সহযোগী মো. হারুন অর রশিদ (৩৮), মো. শামছুদ্দিন বেপারী (৪৮), কৃষ্ণ চন্দ্র দাস (২৮) ও  মো. সুরুজ মিয়া (৩৯)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, দুটি চাপাতি ও সাতটি ছুরি উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, রাজধানীর মোহাম্মদপুর জুড়ে জুলফিকারও তার সহযোগীদের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠে ডায়মন্ড ও দে ধাক্কা। গ্যাং দুটির সদস্যরা নিজেদের আধিপত্য জানান দিতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিত। খুবই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় প্রতিপক্ষ কিশোর গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াত।

আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, জুলফিকারের কিশোরগ্যাং চালানোর জন্য হারুন, শামছুদ্দিন বেপারী, কৃষ্ণ চন্দ্র দাস এবং সুরুজ মিয়া সহযোগি হিসেবে কাজ করত। জুলফিকার মূলত ডায়মন্ড ও দে ধাক্কা গ্রুপের সদস্যদের দেশী-বিদেশী অস্ত্র সরবরাহ করত। দুটি কিশোরগ্যাং গ্রুপের সদস্যরা এলাকায় নিয়মিত মোটরসাইকেল ব্যবহার করে ছিনতাই,  মাদক, ভূমি দখল ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করত।

তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব জানতে পারে, মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়, চাঁদ উদ্যান, লাউতলা, নবীনগর হাউজিং, বসিলা চল্লিশ ফিট, কাঁটাসুর, তুরাগ হাউজিং, আক্কাস নগর, ঢাকা উদ্যান নদীর পাড়, চন্দ্রিমা হাউজিং, নবীনগর হাউজিং, বসিলা হাক্কার পাড় ইত্যাদি এলাকাজুড়ে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো দেশীয় অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাং সদস্যরা ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত।

এছাড়াও কিশোরগ্যাং এর সদস্যরা নিজেদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে পথচারীদের মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতো। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ঠিকাদারের কাজ আটকে দিত।

অধিনায়ক আরিফ বলেন,  জুলফিকার ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। পরবর্তীতে সে পড়াশোনা বাদ দিয়ে একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতে শুরু করে। কিছুদিন ওয়ার্কশপে কাজ করার পর সে নারায়ণগঞ্জে পিকআপে হেলপারি শুরু করে। হেলপারী করা অবস্থায় মালামাল চুরির দায়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ থানায় মামলা হয়। এরপর সে পালিয়ে সৌদি চলে যায়। ২০২১ সালে দেশে আসার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে দুই মাস জেল খেটে জামিনে বের হয়। জেলে বসে হারুনের সঙ্গে জুলফিকারের সখ্যতা গড়ে উঠে।

জুলফিকার জামিনে মুক্ত হয়ে হারুনকে নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে টিউবওয়েলের মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করতে শুরু করে। এ সময়ে মোহাম্মদপুর এলাকায় মাদক সেবনের আড্ডার মাধ্যমে কৃষ্ণ শামছুদ্দিন ও সুরুজসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে তার ঘনিষ্টতা তৈরী হয়। তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ২০২২ সালে সে ডায়মন্ড নামের কিশোরগ্যাং তৈরী করে। এই গ্যাংয়ের সদস্যদের দিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য দিক নির্দেশনা ও অস্ত্র সরবরাহ প্রদান করতে শুরু করে।

পরবর্তীতে সে আরও একটি কিশোরগ্যাং বাহিনী তৈরী করে যার নাম দেয় দে ধাক্কা।  বাহিনী দুটিকে দিকনির্দেশনা প্রদান করে মোহাম্মদপুর এলাকায় সে বিভিন্ন অপকর্ম করতে থাকে। হারুণ ২০২১ সালে আদাবর থানার একটি চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল খাটে, জামিনে এসে জুলফিকার সঙ্গে কিশোরগ্যাং পরিচালনা করতে শুরু করে।

এছাড়াও শামছুদ্দিন বেপারী পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী, কৃষ্ণ চন্দ্র দাস পেশায় চা-বিক্রেতা এবং সুরুজ মিয়া একজন প্রাইভেট কার চালক। তারা সকলেই মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি এলাকায় বসবাস করে। এলাকায় মাদক সেবনের আড্ডার মাধ্যমেই মূলত তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠে। তাদের দৃশ্যমান পেশার আড়ালে তারা কিশোরগ্যাং পরিচালনা ধৃত আসামিদের দ্বারা পরিচালিত কিশোরগ্যাং সদস্যদের গ্রেফতারে র‍্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতা চলমান রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

 

সম্পর্কিত পোস্ট