সরকারি ফুটপাতে ব্যক্তিগত বাড়ির লিফ্ট! আবাসিক ওই বাড়ির তিন তলায় পৌঁছতে সরকারি ফুটপাতের উপরেই লিফ্ট বসানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে।বসানো হয়ে গিয়েছে লিফ্টের চ্যানেলের কাঠামোও।
বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তীর ওয়ার্ডের সল্টলেকের বি জে ব্লকের ঘটনা। এ ভাবে লিফ্ট বসানো বেআইনি জানিয়ে ওই বাড়ির বাসিন্দাদের লিফ্টের খাঁচা খুলে ফেলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী।
তবে কী ভাবে এ ভাবে সরকারি জায়গায় মেয়রের ওয়ার্ডেই ব্যক্তিগত লিফ্ট বসানোর সাহস পেলেন ওই বাড়ির মালিক, সে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় লোকজন। যদিও অভিযুক্ত পরিবারটি কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হয়নি।
বিধাননগরে ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করার অভিযোগ মাঝেমধ্যেই ওঠে। সল্টলেকের বহু জায়গাতেই ফুটপাত দখল করে দোকান তৈরি করা হয়েছে। বাড়ির লাগোয়া ফুটপাত জুড়ে অনেকে বাগানও করেন, যা আইনত করা যায় না। কিন্তু তা বলে বাড়ির সামনের ফুটপাত তথা সরকারি জায়গার উপরে এ ভাবে লিফ্ট বসানোর কথা কখনও শোনা যায়নি বলেই দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সম্প্রতি বি জে ব্লকের ওই বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা গেল, লোকজনও ওই লিফ্টের খাঁচাটি দেখতে যাচ্ছেন। বাড়িটির নীচে একটি ফার্মাসি ও একটি বুটিক রয়েছে। বাড়ির বাসিন্দারা অবশ্য লিফ্ট নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি। কেন আপনারা এ ভাবে ফুটপাতের উপরে লিফ্ট বসালেন? প্রশ্ন শুনেই বাড়ির এক সদস্যের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘সেটা পৌরসভা বুঝবে। আপনাকে বলতে যাব কেন? বাড়ির তিন তলায় যিনি থাকেন, তিনি বসিয়েছেন।’’ যদিও তাঁর ফোন নম্বর ওই ব্যক্তি দিতে রাজি হননি।
বিধাননগর পৌরসভা অবশ্য জানাচ্ছে, ওই ভাবে লিফ্ট বসানো সম্পূর্ণ বেআইনি। ওই বাড়ির বাসিন্দাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ফুটপাতে যেন কোনও ভাবেই লিফ্ট বসানো না হয়। লিফ্টের ওই খাঁচাটিও খুলে ফেলতে হবে। জায়গাটি বিধাননগর পৌরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। যা মেয়রেরই ওয়ার্ড।
আপনারই ওয়ার্ডে এ ভাবে ফুটপাতের উপরে একটি তিনতলা সমান খাঁচা তৈরি করে দেওয়া হল, অথচ কারও নজরে পড়ল না? এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণা বলেন, ‘‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, কেউই বিষয়টি খেয়াল করলেন না। আমি বি জে পার্কে একটি উৎসবের আয়োজন করতে গিয়ে লিফ্টের ওই কাঠামো দেখতে পাই। পার্ক থেকেই সেটি দেখা যাচ্ছিল। তার পরেই ওই বাড়ির বাসিন্দাদের বলা হয়, কাজ না এগোতে। নির্দেশ অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ওই কাঠামো এখনও খোলা হয়নি জেনে অবাক হচ্ছেন পুরসভার আধিকারিকেরাও। তাঁরা জানান, মাসখানেক আগে মেয়র বি জে পার্কে একটি উৎসবে গিয়ে বিষয়টি দেখতে পান। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ধরে নেওয়া যায়, ওই কাঠামো বসাতে বেশ কিছু দিন সময় লেগেছে। অর্থাৎ, মাসাধিক কাল পেরিয়ে গিয়েছে। ওই বাড়ির বাসিন্দারা জানিয়েছিলেন, খাঁচা খুলে দেওয়া হবে। এখনও কেন খোলা হয়নি, খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। এই ঘটনাকে প্রশ্রয় দেওয়ার কোনও কারণ নেই। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
পুরসভা জানিয়েছে, যেখানে ওই লিফ্টের কাঠামো বসানো হয়েছে, তার ঠিক নীচ দিয়ে নিকাশির লাইনও গিয়েছে। লিফ্ট বসানোর কারণে সেই লাইনের কোনও ক্ষতি হয়েছে কি না, তা নিয়েও চলছে জল্পনা। এলাকার লোকজনের একাংশের বক্তব্য, তাঁরা শুনেছেন, প্রশ্নের মুখে পড়ে ওই বাড়ির বাসিন্দারা অন্যদের জানিয়েছেন, ওই ভাবে লিফ্ট বসানোর অনুমতি তাঁদের দেওয়া হয়েছে। যদিও পুর কর্তৃপক্ষ তথা মেয়র নিজেই জানিয়েছেন, লিফ্ট বসানোর জন্য কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ বার ওই লিফ্টের খাঁচা খোলে, না কি লিফ্ট চালু হয়ে যায়, ব্লকের বাসিন্দাদের নজর রয়েছে সে দিকেই।