শিশু চুরি করে ভিক্ষাবৃত্তিতে
মানুষের ফেলে দেয়া জিনিসপত্র আর কাগজ কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন সুমা। প্রতিদিনের মতো গত ২৫ এপ্রিলও দুই বছরের সন্তান রাশিদাকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন তিনি। কিন্তু সেদিন কাগজ কুড়ানোর ফাঁকেই সন্তানকে হারিয়ে ফেলেন তিনি।
শিশু রাশিদা আসলে হারিয়ে যায়নি। চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যান নীলা বেগম (৩০) নামের এক নারী। এরপর ভিক্ষাবৃত্তিতে ব্যবহারের জন্য আটকে রেখে মারধর করে বিকৃত করে দেয়া হয় শিশুটির চেহারা। অবশেষে পুলিশের তৎপরতায় ছয় দিন পর শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় অপহরণে জড়িত নীলা বেগমসহ ১০ বছরের একটি মেয়েকে।
শনিবার (১ মে) রাতে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার কদমতলী এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার এবং ওই দুইজনকে গ্রেফতার করে রাজধানীর বংশাল থানা পুলিশ। পরে তাৎক্ষণিকভাবে শিশুটিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
বংশাল থানা পুলিশ জানায়, মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা সুমা (২৫) রাস্তায় ভাঙারি জিনিস ও কাগজ কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত ২৫ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে কাগজ ও ভাঙ্গারী টোকানোর জন্য বংশালে যান। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পুরাতন বংশাল রোডের মাথায় মেয়েকে বসিয়ে রেখে কাগজ সংগ্রহ করছিলেন সুমা। কিছুক্ষণ পরে দেখতে পান তার মেয়ে আর সেখানে নেই।
আশে-পাশে অনেক খোঁজাখুজি করে না পেয়ে বংশাল থানায় একটি নিখোঁজ জিডি (নং-১১৬১) করেন তিনি। ওই জিডির পরিপ্রেক্ষিতে শিশু রাশিদাকে খুঁজে পেতে চার সদস্যের টিম গঠন করে পুলিশ। তদন্তে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দুজনকে শনাক্ত করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কদমতলীর শহিদনগর এলাকা থেকে শিশু রাশিদাকে উদ্ধার এবং দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.শাহীন ফকির জানান, আসামি নীলা বেগম ও আরেকজন পরস্পরের যোগসাজশে শিশুটিকে চকলেট খাইয়ে কৌশলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো শিশুটিকে ভিক্ষাবৃত্তিতে ব্যবহার করা। আর সেজন্য মারধর করে শিশুটির চেহারা বিকৃত করে দেয়া হয়।
ওসি বলেন, উদ্ধার শিশুটির শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। পুলিশের তৎপরতায় তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয় মায়ের কোলে। এদিকে, এ ঘটনায় জড়িত দুজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান ওসি শাহীন ফকির।