মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সেনাপতি, সাবেক মন্ত্রী বঙ্গবীর জেনারেল মুহম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (১৬ ফেব্রুয়ারি)। ১৯৮৪ সালের এই দিনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

জেনারেল মুহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী (এম এ জি ওসমানী) ১৯১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জে। তার বাবা খান বাহাদুর মফিজুর রহমান ও মা জোবেদা খাতুন।

তিনি ১৯৩৪ সালে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় ব্রিটিশ ভারতের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এ অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য ব্রিটিশ সরকার তাকে প্রাইটোরিয়া পুরস্কার প্রদান করে।

১৯৩৯ সালে এমএজি ওসমানী রয়েল আর্মড ফোর্স ক্যাডার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪২ সালে তিনি মেজর পদে উন্নীত হন এবং তৎকালীন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সর্বকনিষ্ঠ মেজরের পদমর্যাদায় ভূষিত হন। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ওসমানী ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে লং কোর্স পরীক্ষা দিয়ে উচ্চস্থান লাভ দেশবিভাগের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এসময় তার পদমর্যাদা ছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল।

১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ববাংলার আরও কয়েকটি আঞ্চলিক স্টেশনের দায়িত্বও তিনি সফলতার সঙ্গে পালন করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি কর্নেল পদমর্যাদা লাভ করেন এবং সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টারের জেনারেল স্টাফ অ্যান্ড মিলিটারি অপারেশনের ডেপুটি ডিরেক্টরের দায়িত্ব পান। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি পাকিস্তানের হয়ে যুদ্ধ করেন। পাক-ভারত যুদ্ধ যখন শেষ হয় তখন তার বয়স চল্লিশের উপরে। ১৯৬৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি অবসর গ্রহণ করেন।

১৯৭০ সালের জুলাই মাসে তিনি রাজনীতিতে যোগদান করেন এবং ওই বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ থানার সমন্বয়ে গঠিত পাকিস্তানের বৃহত্তম নির্বাচনী এলাকা থেকে তার নিকট চারজন প্রতিদ্বন্দ্বীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে জাতীয় পরিষদে জয়লাভ করেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জাতির সংকটময় মুহূর্তে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত হন এবং শত্রুর বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার স্বার্থে একটি সেনাবাহিনী, একটি গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলেন। জাতির প্রতি তার চরম ত্যাগ ও মহান সেবার স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্নেল ওসমানী পি.এম.সি.কে জেনারেল পদে উন্নীত করেন। ১৯৭২ সালের ৭ এপ্রিল হতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়কের পদ বিলুপ্ত হওয়ায় তিনি সামরিক বাহিনী থেকে ছুটি নেন এবং বাংলাদেশ গণপরিষদের সদস্য হিসেবে পরিষদের আসন গ্রহণ করেন।

সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ও আজীবন গণতন্ত্রী জেনারেল ওসমানী ১৯৭২ সালের ১২ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের জাহাজ চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ ও বিমান চলাচল মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের জন্য একটি সুষ্ঠু নৌ পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

আতাউল গণী ওসমানী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুইবার মন্ত্রী হন। তিনি ১৯৭৪ সালের ১ মে বাকশাল গঠনের বিরোধিতা করে একসাথে মন্ত্রিসভা ও সংসদ সদস্য পদ থেকে এবং  আওয়ামী লীগ থেকেও পদত্যাগ করেন।

১৯৭৫ সালের ২৯ আগস্ট তিনি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদের অনুরোধে প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন কিন্তু ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে পদত্যাগ করেন এবং ১৯৭৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর নিজস্ব রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় জনতা পার্টি’ গঠন করেন। তিনি দুইবার ১৯৭৮ এবং ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।

ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে চিকিৎসারত অবস্থায় ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এম এ জি ওসমানী মৃত্যুবরণ করেন। তাকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় সিলেটে সমাহিত করা হয়।

ওসমানীর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি সংসদ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আয়োজনের মধ্যে রয়েছে- কবর জিয়ারত, শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি।

সম্পর্কিত পোস্ট