পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি রোজা-রমজান-ঈদ কোনোটাই মানে না। তারা এখন রমজানের মধ্যে কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছে, ঈদের দিনও কর্মসূচি দেয় কি না সেটিই দেখার বিষয়।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ‘বিএনপি রমজানে কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছে’ এমন প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি যে ভুল করেছে সে জন্য তাদের দলটা ‘ধপাস’ করে পড়ে গেছে। এখন তারা কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারবে কি না সেটি বিষয়। আর এই ভুলের জন্য নেতারা কর্মীদের তোপের মুখে পড়েছে, রমজানে কর্মসূচি দিলে তারা জনগণের তোপের মুখে পড়বে।
এ সময় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত গাজায় যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেওয়ায় প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান বলেন, গাজায় নারী-শিশুদের নির্বিচারে হত্যাই শুধু নয়, সেখানে পানি-বিদ্যুৎসহ সকল ‘বেসিক সাপ্লাই লাইন’ পরিকল্পিতভাবে ব্যাহত করা হচ্ছে, হাসপাতালে অভিযান-হামলা চালানো হচ্ছে, চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এবং এটি আন্তর্জাতিক আইন-কানুনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কেউ কেউ ইসরাইলিদের নিরাপত্তার কথা বলে, তাহলে এই ফিলিস্তিনি নারী-শিশুদের নিরাপত্তা, ফিলিস্তিনিদের অধিকার কোথায় গেলো। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের অত্যন্ত বন্ধুপ্রতিম সম্পর্ক কিন্তু এই ভেটো প্রদান গভীর হতাশাব্যঞ্জক। আমরা কোথাও যুদ্ধ চাই না, যুদ্ধ বন্ধ হোক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের (Joe Biden) চিঠি ও তাদের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া ব্যুরোর ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতারের (Afreen Akhter)
আসন্ন সফরের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠি অত্যন্ত গুরুত্ববহ এবং তাদের কর্মকর্তাদের সফর আমাদের সম্পর্ককে আরও গভীর ও বিস্তৃত করবে।
সৌদি, মিশরের রাষ্ট্রদূত ও অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারের সাক্ষাত
এর আগে সকাল থেকে দুপুর অবধি মন্ত্রণালয়ে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইওসেফ আল দুহাইলান (Essa bin Yosef Al Duhailan), মিশরের রাষ্ট্রদূত ওমর মহি এলদিন ফাহমী (Omar Mohie Eldin Ahmed Fahmy) এবং অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নার্দিয়া সিম্পসন (Nardia Simpson) পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন।
সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, এক সময় সৌদি আরবের সাথে শুধুমাত্র জনশক্তি রপ্তানি আর হজের সম্পর্ক ছিল। এখন এই সম্পর্ককে আমরা বিনিয়োগ সম্পর্কে রূপ দিতে চাই। সৌদি আরবের সরকার এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য ইকোনমিক জোনে সৌদি আরবকে ৩০০ একর জমির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তারা আরও ৩০০ একর জমি তারা চেয়েছে। বৈঠকে তাদের মধ্যপ্রাচ্যব্যাপী পরিবেশ পরিকল্পনা ‘সৌদি গ্রিন ইনিশিয়েটিভে’ বাংলাদেশি কৃষিবিদসহ অন্যদের ভূমিকা রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, জানান হাছান।
সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদ বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে।
চলতি বছর মিশরের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে, শিগগিরই এটি উদযাপিত হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মিশর তাদের দেশে পাট চাষ করতে চায়, এ বিষয়ে তারা বাংলাদেশের সহায়তা চেয়েছে। আমরা বলেছি, এ বিষয়ে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।
অস্ট্রেলিয়ার সাথে আলোচনার বিষয়ে মন্ত্রী জানান, আইসিটি, চামড়া খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার সাথে আলাপ হয়েছে। তারা এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের বড় উন্নয়ন অংশীদার অস্ট্রেলিয়াকে ইকোনমিক জোনগুলোতে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানিয়েছি। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির বিষয়েও আলাপ হয়েছে।