মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

দরিদ্রদের জন্য চিকিৎসাসেবা সহজ করার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

দরিদ্রদের জন্য চিকিৎসাসেবা সহজ করার উপর জোর দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, গরিবদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত এবং এটি নিশ্চিত করতে হবে যে- তারা (গরিব) যেন চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হয় বা অর্থের অভাবে অবহেলিত না হয়। প্রতিটি নাগরিকের জন্য দূষণমুক্ত ও পরিবেশ-বান্ধব একটি সুস্থ জীবন নিশ্চিত করে কল্যাণমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করাই সরকারের লক্ষ্য।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘চতুর্থ আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন-২০২৪’ উদ্বোধনকালে দরিদ্রদের জন্য চিকিৎসা পরিষেবা আরও সহজ করতে চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং ইউএসএ ইন্টারভেনশনাল একাডেমি এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক বা ভুয়া চিকিৎসকদের দ্বারা কেউ যেন প্রতারিত না হয়- সেজন্য সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে জানিয়ে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, দেশের এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা প্রদান করা একটি চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সরকার ইতোমধ্যেই উন্নত চিকিৎসা সেবার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। রোগীদের সাথে সদয় আচরণ করুন এবং রোগীর মর্যাদা ও গোপনীয়তা রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করুন।
রাষ্ট্রপতি চিকিৎসা শিক্ষা, চিকিৎসা, সেবা ও গবেষণা কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়ন এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার উন্নতির প্রশংসা করেন। দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা অপ্রতুল- উল্লেখ করে সাহাবুদ্দিন দেশের সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত ও চিকিৎসকদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
তিনি বলেন, বিশাল জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসা-সেবা প্রদানে চিকিৎসক ও নার্সদের আরও আন্তরিক হতে হবে। চিকিৎসাকে একটি মহৎ পেশা হিসেবে উল্লেখ করে- সাহাবুদ্দিন বলেন, কিছু কিছু ভুয়া চিকিৎসক ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার কারণে সমগ্র চিকিৎসক সমাজের সততা ও সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। কিছু অসাধু লোক (চিকিৎসক), ভুয়া চিকিৎসক ও অবৈধ চিকিৎসা কেন্দ্রের কারণে সাধারণ মানুষের মনে যাতে কোনো নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি না হয়- সে ব্যাপারে আপনারা সতর্ক থাকবেন।
বাংলাদেশের চিকিৎসকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বিশ্বমানের চিকিৎসক রয়েছেন, যাদের ওপর নির্ভর করা যায়।
এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য তুলে ধরেন- যা সারা বিশ্বে রোল মডেল তৈরি করেছে। এর জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
এ ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজনের উদ্যোগের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে- রাষ্ট্রপতি বলেন, হৃদরোগ বিষয়ে দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ ও মতবিনিময় সভা চিকিৎসকদের, বিশেষ করে তরুণ চিকিৎসকদের পেশাগত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধকরনে সহায়ক হবে।
সাহাবুদ্দিন আরো বলেন, “চিকিৎসা বিজ্ঞান সবসময় পরিবর্তনশীল। নতুন নতুন রোগের আবির্ভাব হওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসা বিজ্ঞান সেগুলো মোকাবেলায় অগ্রসর হয়। রোগের বিভিন্ন ধরণ ও প্রকৃতির কথা বিবেচনায় রেখে চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত।”
তিনি হৃদরোগ, ক্যান্সার, এইডস ও অন্যান্য মারাত্মক রোগ প্রতিরোধে আরও সচেতনতা তৈরির প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসা-সেবা পৌঁছে দিতে তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাস্থ্য খাতে ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আপনাদের (চিকিৎসকদের) কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার নতুন হাসপাতাল ও নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে- যার ফলে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে।
সম্মেলনে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, ইন্টারভেনশনাল একাডেমির কোর্স চেয়ারম্যান, ইউএসএ, ডা. রাজেশ এম দেব, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ ও বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান।

সম্পর্কিত পোস্ট