সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, আমাদের এই চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন, আমাদের এই অহিংস আন্দোলন, গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলন, বাকস্বাধীনতার আন্দোলন, ভোটের অধিকারের আন্দোলন সারা বাংলাদেশে চলবে।
শনিবার (৯ মার্চ) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে সারাদেশে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এ সমাবেশ হয়। পরে মির্জা আব্বাস সেখানকার পথচারীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেন।
তিনি বলেন, আজকের কর্মসূচি দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতির প্রতিবাদে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, বাড়ছে, বাড়বে। আমরা এটাই শুধু জনগণকে জানাতে চাই। আর কিছুই না।
মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা বলতে চাই, গণতান্ত্রিক আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয় নাই। সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হতে পারে, কিন্তু সার্বিকভাবে কখনো ব্যর্থ হয় নাই। আজ না হয় কাল জনতার হাতে এই ফ্যাসিস্ট দখলদার সরকারের পতন ঘটবেই। এদের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
‘মুসোলিনি-স্ট্যালিনরা বহুদিন রাজত্ব করেছে। কিন্তু পরিণতি হয়েছে ভয়াবহ। জনগণের আন্দোলনের মুখে কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার টিকে থাকতে পারে নাই। আজকে যে সরকার আছে এটাকে সরকার বলা যাবে না। এরা জোর করে জনগণের ভোটের বাইরে ক্ষমতায় টিকে আছে। ক্ষমতায় টিকে আছে লুটপাট করার জন্য, ক্ষমতায় টিকে আছে চুরি করার জন্য, ক্ষমতায় টিকে আছে এদেশের মানুষকে কষ্ট দেওয়ার জন্য’, বলেন তিনি।
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, আমরা আন্দোলন করতে করতে এই পর্যন্ত এসেছি। আমাদের বয়স হয়ে গেছে। এখন পরবর্তী প্রজন্মকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের মনোবল ঠিক রাখতে হবে, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং নিজেদের মধ্যে গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটাতে হবে। এই সরকারের পতন ঘটানোর জন্য ঐক্যের কোনো বিকল্প নাই। আপনারা অনেক সহ্য করেছেন, আরও সহ্য করতে হবে। যদি বলেন, কতদিন সহ্য করতে হবে- এটা বলা সম্ভব না।
২৮ অক্টোবর বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ‘পুলিশি হামলার ঘটনা সরকারের পূর্বপরিকল্পিত’ উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ২৮ তারিখ কী হয়েছিল? সেই প্রথম থেকেই একটা নকশা করা হয়, যেন বিএনপি ক্ষমতায় আসতে না পারে, যেন বিএনপি নির্বাচনে আসতে না পারে। এই চক্রান্ত প্রথম থেকেই শুরু হয়েছে। সেজন্য দুই বছর আগে থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের বেছে বেছে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, আমাদের ওপরে ২৮ তারিখে যেটা হয়েছে নির্মম নির্যাতন, বর্বরোচিত হামলা। এই হামলায় আমি এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন শেষ পর্যন্ত মঞ্চে ছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম টিয়ারশেল আমাদের ট্রাকে এসে পড়ছে, সামনে রাইফেল হাতে পুলিশ দাঁড়ানো, হয়তো গুলি করবে, টিকে থাকা সম্ভব হবে না, তখন আমরা মঞ্চ থেকে নেমে যেতে বাধ্য হয়েছি। এমন নারকীয় ঘটনা ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনীও ঘটায়নি, সেটা ওরা ঘটিয়েছে।
কারাগারে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্মম নিপীড়ন-নির্যাতনের ঘটনা উল্লেখ করে সদ্য কারামুক্ত মির্জা আব্বাস বলেন, এই নির্যাতন ও অত্যাচার যেভাবে সীমা ছাড়িয়ে গেছে এটা আর সহ্য করা যায় না, বর্ণনা করা যায়। তারপরও আমাদের নেতাকর্মীরা এখনো তাদের মনোবল হারায়নি। তারা আশায় আছে, তারা যুদ্ধ করবে এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করবে। অবশ্যই এই সরকারের পতন ঘটবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, স্বেচ্ছোসেবক দলের সাদরেজ জামান, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও নাছির উদ্দিন নাছির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।