মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে কাজ করতে গিয়ে কমবেশি লাখ খানেক বাংলাদেশি কর্মী দুর্গতির শিকার। সেখানে তারা কোনো কাজ পাচ্ছে না। প্রবাসী শ্রমিকদের এই সঙ্কট নিয়ে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, শ্রমিকদের সংকট নিরসনে দূতাবাসকে আলাপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখানে আমরা মালয়েশীয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও আলোচনা করেছি। আমাদের পরিকল্পনা আছে, তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করার।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) মালয়েশীয় পামওয়েল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন যে এই নিষেধ্বাজ্ঞার ফরে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মালয়েশীয় পামওয়েল বিক্রি করার অনেক জায়গা আছে। এর জন্য বাংলাদেশি শ্রমিকদের অসুবিধা হবে না।
উল্লেখ্য যে গত ১২ মার্চ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হানজা মোহাম্মদ হাশিম। ওই সময়ে সাংবাদিকরা মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে কাজ করতে গিয়ে কমবেশি লাখ খানেক বাংলাদেশি কর্মীর দুর্গতির শিকার ইস্যূতে জানতে চাইলে হাইকমিশনার হানজা মোহাম্মদ হাশিম সাংবাদিকদের বলেন, মালয়েশিয়া অঙ্গিকার রক্ষা করে চলে। বাংলাদেশি কর্মীরা যে মালয়েশিয়ায় কঠোর পরিশ্রম করছে সেজন্য মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশি এই কর্মীদের প্রশংসা করে।
সিন্ডিকেটের কারণেই বাংলাদেশি কর্মীরা সেখানে বিরুপ পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া দুই দেশের লোকজনই জড়িত। তাই পরিস্থিতির উন্নতিতে দুই দেশেরই সহযোগিতা প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশ সরকার খুবই সহযোগিতাপূর্ণ। আর মালয়েশিয়া সরকার সব সময়েই অঙ্গিকার রক্ষা করে চলে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের কল্যাণের বিষয়টি আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিব।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মী এবং অভিবাসন বিশেষজ্ঞ এন্ডি হল তার ওয়েব সাইটে জানিয়েছে যে, মালয়েশিয়ায় কাজের অধিক পরিমাণ বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যে কারণে মালয়েশিয়ায় বর্তমানে কমবেশি এক লাখ বাংলাদেশি কর্মী বেকার অবস্থায় রয়েছে। এদের অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছে। এদের অনেককেই মালয়েশিয়ার এনজিওধর্মী প্রতিষ্ঠানগুলো চাদা তুলে খাবারের ব্যবস্থা করছেন। অনেক সময়েই বাংলাদেশি এই কর্মীদের দিয়ে জোড়পূর্বক কাজ করানো হয়।
এসব নানান কারণে বাংলাদেশি কর্মীদের মধ্যে মানসিক উদ্বেগসহ বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এদেরই একজন ৩৩ বছর বয়সী শফিকুল ইসলাম গত ৬ মাস আগে কাজের উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়া আসেন। কিন্তু কাজ পাওয়ায় তিনি দেশে ফেরত যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য হাইকমিশন থেকে ছাড়পত্রও নিয়েছিলেন। তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত নিজের দেশে যাওয়ার আগে তিনি হার্ট এ্যটাক করে মারা যান। বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ায় এমন করুণ পরিস্থিতির পেছনে অনৈতিক অভিবাসন প্রক্রিয়া কাজ করছে। যেখানে দুই দেশের এজেন্টরা নিজেদের পকেট ভারি করতে মানবব পাচারের মত অপরাধে যুক্ত হচ্ছে।