‘কিশোর গ্যাং’ মোকাবিলার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে এই কিশোর-তরুণদের অন্য অপরাধীদের মত না দেখে সংশোধনের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। আর এ কাজে অভিভাবক, শিক্ষক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে যুক্ত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
সোমবার (৮ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় এ নির্দেশ দেন তিনি। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
বৈঠকে ‘ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২৪’ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়া ব্যয় কমিয়ে আমদানি-রফতানি এবং স্থানীয় পণ্যের সহজ ও অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে ‘জাতীয় লজিস্টিক নীতিমালা, ২০২৪’ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কিশোর গ্যাং বা কিশোর অপরাধীদের যখন মোকাবিলা করা হয়, সে ক্ষেত্রে যেন মনে রাখা হয় তারা ভবিষ্যতের নাগরিক। প্রথাগত অন্য অপরাধীদের সঙ্গে যেন মিলিয়ে ফেলা না হয়।
সমাজে, রাষ্ট্রে তারা যেন তাদের প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করতে পারে, সেভাবে যেন আমরা তাদের সংশোধন করি। এজন্য কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে বলেছেন। কিশোর অপরাধীদের যখন ব্যবস্থাপনা করা হয়, তখন যেন অবশ্যই মনোবিজ্ঞানী বা কাউন্সিলিং বড় ভূমিকা পালন করে। অভিভাবক, শিক্ষক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে বলেছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কিশোর অপরাধী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। তাদের যেন দীর্ঘ মেয়াদে অপরাধী বানিয়ে ফেলা না হয়, সংশোধনের সুযোগ যেন থাকে। কারাগারে যেন অন্য আসামিদের সঙ্গে না রাখা হয়, সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন। আর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প নিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কেও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। তারা এ ব্যাপারে কাজ শুরু করবে।
বর্তমানে তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র (গাজীপুর, টঙ্গী ও যশোর) থাকার কথা জানিয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, সংখ্যাটি বাড়াতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া আরও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে বলেছেন, যাতে তারা সংশোধিত হতে পারে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইন তার স্বাভাবিক গতিতে চলবে। কিন্তু কিশোর অপরাধী যখন মোকাবিলা করা হবে, তখন যেন মনে রাখা হয়, তাকে যেন আরও অপরাধী না বানিয়ে ফেলা হয়। সংশোধন করার একটি পরিবেশ যেন থাকে।
বৈঠকে ‘ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২৪’ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নাটোর জেলায় স্থাপনের জন্য গত বছর অক্টোবরে এই আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সংসদে আইন আকারে এটি পাস করতে পারেনি। সে কারণে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় এটি অনুমোদন নিতে হয়েছে। খসড়াটি যেহেতু আগেই চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, এখন সেটিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
লজিস্টিক নীতিমালা
আমদানি-রফতানি এবং স্থানীয় পণ্যের সহজ ও অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে ‘জাতীয় লজিস্টিক নীতিমালা, ২০২৪’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে এর আগে বাংলাদেশে কোনো নীতিমালা হয়নি। অনেকদিন থেকে এটা নিয়ে দাবি ছিল। আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যে লজিস্টিক সাপোর্টের গুরুত্ব অপরিসীম। মোট ব্যয়ের একটা বড় অংশ এখানে আছে।
এ নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্ধারিত সময় বা স্বল্পতম সময়ে স্বল্পতম ব্যয়ে স্মুথলি যেন পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাটা নিশ্চিত হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে কার্যক্রম গ্রহণ করবেন এবং কী কার্যক্রম গ্রহণ করলে এই সার্ভিসটা দেওয়া সম্ভব হবে, সে সংক্রান্ত একটি দিক-নির্দেশনা এ নীতিমালায় আছে।
তিনি বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কাউন্সিল গঠন করা হবে। কাউন্সিল সামগ্রিক দিকনির্দেশনা দেবে। এছাড়া মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি সমন্বয় কমিটি থাকবে। ‘উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রফতানি পণ্য উৎপাদন স্থান থেকে ক্রেতার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত যাত্রাটি যেন বাধাহীন হয়, সেজন্য কী সহায়তা করা যায়- সেটার জন্য নীতিমালা করা হয়েছে। আগে এটি ছিল না, এটি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে করা হলো।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, লজিস্টিকের কিছু অবকাঠামো খাত আছে। আমাদের যোগাযোগের যে অবকাঠামো আছে, সেখানে আমরা সড়কনির্ভর হয়ে গেছি। সামনে রেল ও নৌপথ নির্ভরতা বাড়াতে যা যা করণীয়, তা করা হবে। এছাড়া জিপিএস ট্র্যাকিং ও কানেক্টিভিটি হাব, অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট জায়গায় একটি কানেক্টিভিটি হাব হবে। সেখানে পণ্য সরবরাহের জন্য ওয়ারহাউস (গুদামঘর) ও পণ্য যেন পঁচে না যায়, সে ব্যবস্থা করা হবে। নীতিমালায় রফাতানি মুখ্য ধরা হয়েছে এবং স্থানীয় বাজারের কথাও বলা হচ্ছে। পণ্যের অবাধ যাতায়াতের জন্য যেসব অবকাঠামো দরকার সে বিষয়ে নীতিমালায় বলা আছে।
মাহবুব হোসেন বলেন, এ সংক্রান্ত সব নীতিমালা পরীক্ষা করে তা ব্যবসাবান্ধব করতে বলা হয়েছে। কোন সেবা ব্যক্তিখাতে আসবে, কোনটা পিপিপি হবে, কোনটায় সরকার বিনিয়োগ করবে, সে তালিকাও রয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়ন একটি বড় খাত, আমরা দেখেছি এখানে ১০৬ ধরনের পেশার কথা হয়েছে, সেখানে ৫২ ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণও রয়েছে। সর্বনিম্ন কত ঘণ্টার প্রশিক্ষণ হবে, তারও একটা বিধানের কথা রয়েছে।