ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করতে হবে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, দুই দিনের জ্বরে আমার মা ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। এই বেদনা আমি বুঝি। তাই ডেঙ্গুর ব্যাপারে আমার চিন্তা আছে। ডেঙ্গুতে আমি মাকে হারিয়েছি, আর কেউ যেন না হারায়। তাই ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধির আগেই তা প্রতিরোধে জনসচেতনতায় গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।
মঙ্গলবার (৭ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ২০২৪ সালের ডেঙ্গু প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, সব রোগের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে যাতে রোগটি কারও হওয়ার আগেই প্রতিরোধ করা যায়। যাতে মানুষের ডেঙ্গু না হয় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। মশা নির্মূলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশন এবং যে ঘরে মানুষ থাকে সেখানকার সবাইকেই সচেতন থাকতে হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা অনেক আলোচনা ইতোমধ্যে করেছি। আমি নির্দেশনা দিয়েছি যাতে ডেঙ্গু বৃদ্ধির সময়ে কোনোভাবেই স্যালাইন সংকট দেখা না দেয় এবং স্যালাইনের দামও না বাড়ে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়লে হাসপাতালগুলো খালি রাখার ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দিয়েছি। যাতে করে যাদের প্রয়োজন তাদের ভর্তি করানো যায়। আর যাদের কম প্রয়োজন তাদেরও যেন হাসপাতালে ভর্তি না করিয়ে চিকিৎসা দেওয়া যায়।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের ফগিং বিষয়ে কিছু ভুল ধারণা আছে। এ বিষয়ে আলোচনা করব। সিটি কর্পোরেশনের সাথেও ওপেনলি আলোচনা করব।খালি এখানে বক্তৃতা দিয়ে চলে গেলাম, তারপর ভুলে গেলাম, সেটা করলে চলবে না। আমাকে কাজ করতে হবে, কথা কম কাজ বেশি।
ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গুর ভালো চিকিৎসা আছে উল্লেখ করে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, চিকিৎসাতে কোনও ঘাটতি হবে কিংবা চিকিৎসা জানে না- এমন আর হবে না। ভালো চিকিৎসা ঢাকার বাইরেও হবে, ঢাকার ভেতরেও হবে। এতে কোনও সন্দেহ নাই।
তিনি বলেন, জ্বর এলে আমরা যদি সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করে হাসপাতালে ভর্তি হই, তাহলে ভালো চিকিৎসা এবং সুচিকিৎসা পাওয়া যাবে। ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়ে আমি বিশ্বাস করি, একেবারে উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসক যারা আছেন তারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
দেশে বিভিন্ন সময় ডেঙ্গু সংক্রমণের আচরণগত নানা পরিবর্তন ঘটেছে বলে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম বলেন, কীটতত্ত্ববিদরা জানিয়েছেন- ডেঙ্গুর ভেক্টরের আচরণগত পরিবর্তন এসেছে। আমরা জেনেছি ডেঙ্গু মশা রাতেও কামড়াচ্ছে এবং শুধুমাত্র পরিষ্কার পানিতে জন্মে না, ময়লা পানিতেও জন্মাচ্ছে। এমনকি গাছের কোঠরেও ডেঙ্গুর লার্ভা জন্মাচ্ছে। গাছের কোঠরে যদি মশা জন্মানো শুরু করে, গ্রাম এলাকার জন্য এটি একটি আশনি সংকেত।
এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, আমরা জানি যে গ্রামে গাছ-পালা অনেক বেশি। এসব গাছের কোঠরে যদি মশা জন্মায়, তাহলে সেখান থেকে মশা মারার ব্যবস্থা করতে হবে, যা আমাদের জন্য অনেক বেশি কঠিন হবে।
তিনি বলেন, মশা মারার ক্ষেত্রে যেসব ওষুধ ব্যবহার করে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং জানিয়েছেন যে ফগিংয়ে কোনো মশা মারা যায় না। এছাড়া ভারতেও উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় বন্ধ করা হয়েছে ফগিং করা। আমরা এ বিষগুলো নোট নিয়েছি। বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবো।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) শাখার পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান, বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার, বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টসের (বিআরআইসিএম) মহাপরিচালক ড. মালা খান প্রমুখ।