নাঈমুর ইসলাম
সামান্য সময় ব্যয় করে অনেক বড় সম্পদ অর্জন করা যায়, আবার অবহেলায় উদাসীনতায় উড়িয়েও দেওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ অতীতের বেকার সময় নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। মনে হয়, সময়গুলো কাজে লাগালে বর্তমান অনেক সুন্দর হতো। মানুষ সবচেয়ে বেশি আফসোস করবে পরকালে।
মৃত্যুপরবর্তী জীবনে মানুষের সম্পদ হবে নেক আমল। অবসর সময় কাজে লাগিয়ে নেক আমল না করায় মানুষ হতাশ হয়ে পড়বে। পরকালে যখন আমল পরিমাপ করা হবে তখন মানুষ চরম পেরেশান হবে। কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যাবে একটি মাত্র নেকির কারণে সে আটকে গেছে। তখন সে তার পরিচিতজন পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্ত্রী-পুত্র সবার দ্বারে দ্বারে গিয়ে একটি নেকির জন্য হাত পেতে থাকবে। কেউ দেবে না। সবাই আপন আপন সম্পর্ককে অস্বীকার করবে। কেউ কাউকে চিনবে না। চিনেও না চেনার ভান করবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘যখন কেয়ামত উপস্থিত হবে। সেদিন মানুষ পলায়ন করবে তার ভাইয়ের কাছ থেকে, তার মায়ের কাছ থেকে, বাবার কাছ থেকে, তার স্ত্রী ও সন্তানের কাছ থেকে, সেদিন তাদের প্রত্যেকের এমন গুরুতর অবস্থা হবে যে, প্রত্যেককে আপন আপন আমলনামা ব্যস্ত করে রাখবে।’ (সুরা আবাসা : ৩৩-৩৭)
হাশরের ময়দানে সেই কঠিন পরিস্থিতিতে সর্বপ্রথম যে আমলের হিসাব নেওয়া হবে, তা হচ্ছে নামাজ। যদি তার ফরজ নামাজে কোনো ঘাটতি থাকে, জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত পরিমাণ সওয়াব আমলনামায় না থাকে, তা হলে নফল নামাজের মাধ্যমে ফরজের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করা হবে।
হাদিসে এসেছে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। যদি সে সঠিক হিসাব দিতে পারে তবে কৃতকার্য হয়ে যাবে। আর যদি ব্যর্থ হয় তবে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হয়ে যাবে। যদি তার ফরজগুলোর মধ্যে কোনো ঘাটতি থাকে তবে আল্লাহ তায়ালা বলবেন-দেখো, আমার বান্দার কোনো নফল আছে কি না? যদি থাকে তবে তা দিয়ে তার ফরজের ঘাটতি পূরণ করা হবে। অতঃপর একইভাবে তার অন্যান্য আমলের হিসাব নেওয়া হবে।’ (আবু দাউদ : ৭৭০, তিরমিজি : ৩৩৭)
সুতরাং, সেদিন হিসাবের সেই সংকট থেকে যদি কেউ নাজাত পেতে চায়, কৃতকার্য হতে চায়, তা হলে অবশ্যই প্রথমে ফরজ নামাজ ঠিকমতো আদায় করতে হবে। তারপর অবসর ও সুযোগ পেলেই বেশি বেশি নফল নামাজ পড়তে হবে। আল্লাহর নবী (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে নিষ্পাপ ও পূত-পবিত্র হওয়ার ঘোষণা সত্ত্বেও এত বেশি পরিমাণে নফল নামাজ পড়তেন যে, তার পা ফুলে যেত। হাদিসে এসেছে, হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত-‘আল্লাহর রাসুল (সা.) নফল নামাজে এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কেরাত পড়তেন যে, তার পা ফুলে যেত। সাহাবারা বললেন-আল্লাহ আপনার আগে-পরের সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন তবু আপনি কেন এত দীর্ঘ নফল নামাজ পড়েন? উত্তরে নবীজি (সা.) বলেন- আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?’ (বুখারি ও মুসলিম সূত্রে মেশকাত : ১২২০)। আল্লাহ তায়ালা বোঝার ও আমল করার তওফিক দিন।
সূত্র: দৈনিক সময়ের আলো