রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, ৭২’র সংবিধানে ফিরে যেতে সরকার ওয়াকিবহাল। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সংবিধানকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেভাবে চেয়েছিলেন সেটি করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ধরে রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর।
শনিবার (১৮ মে) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ৮ম জাতীয় সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীরা মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জনকে ধ্বংস করতে চায়। তারা এখনো দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আর তারা আছে বলেই একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রয়োজন রয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীকি ফাঁসি দিয়েছিল এই সংগঠন। তারা এভাবে উজ্জীবিত থাকলে স্বাধীনতা বিরোধীরা আমাকে আর আমাকে ফাঁসি দেওয়ার সুযোগ পাবে না।
স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে পতাকা উঠলে আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আমারা কি আর জীবীত থাকি? এখনো ওরা স্লোগান দেয় পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার। স্বাধীনতা বিরোধীরা এখনো সক্রিয়। তাই একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রয়োজন রয়েছে। এরা সুযোগ পেলেই সাপের মত ছোবল মারতে চায়।
একাত্তরের পরাজিত ঘাতক দালালদের বিরুদ্ধে ইস্পাত কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এরশাদ, জিয়া ও খালেদার সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তছনছ হয়ে গেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে চলার পথ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দাড়প্রান্তে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তী সংখ্যালঘু নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। তখন ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিশন গঠন করে সরকার। ওই কমিশনের আমি প্রধান ছিলাম। এই কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কৃপণতার সঙ্গে মাত্র ৫০ কপি প্রকাশ করেছিল। একটি সংগঠন সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল। সংগঠনটির নাম বলতে চাই না। তাদের মূল এজেন্ডা ছিল আমার প্রতিবেদন। তারা বলেছিল, তারা ক্ষমতায় গেলে আমাকে ফাঁসি দেওয়া হবে। হয়তো তারা আমাকে ফাঁসি দিতে পারবে না। সেই সুযোগ টা তারা পাবে না। কারণ আজকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যেভাবে জেগে উঠেছে তারা আর আমাকে ফাঁসি দিতে পারবে না।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে তিনি আরো বলেন, নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে নিজেদের অবস্থানে থেকেছেন। নিজেদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়নি। এ জন্য ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিকে অভিবাদন জানাই।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রপতির আসনটি নিরপেক্ষ। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার আমি স্বাধীনতার পক্ষের পরিবারে জন্ম নিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। বেঁচে গেছি বলেই আজকে রাষ্ট্রপতি। আমার বাবা মাও কোনোদিন ভাবেননি আমার ছেলে রাষ্ট্রপতি হোক। তারা হয়তো দোয়া করেছিলেন আমার ছেলে মানুষ হোক। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছায় আজকে রাষ্ট্রপতি। তাই রাষ্ট্রপতি হয়েছি বলে কি নিরপেক্ষ হতে গিয়ে আদর্শ বিচ্যুত হবো। নিরপেক্ষতার খোলসে আমাকে আটকে রাখা যায় না।
এ সম্মেলনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলন সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি ও মানবাধিকার নেতা নির্মল রোজারিও, আদিবাসী মুক্তি মোর্চার সভাপতি অধ্যাপক যোগেন্দ্রনাথ সরেন, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়, ন্যায় অধিকার তৃতীয় লিঙ্গ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান সমাজকর্মী আনোয়ারা ইসলাম রাণী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক সমাজকর্মী কাজী মুকুল। পরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে সংগঠনটি।
এর আগে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন শাহরিয়ার কবির এবং মুক্তিযুদ্ধে ৮ জন শহীদের উত্তরসূরী- মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভাষাসংগ্রামী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী মানবাধিকার নেত্রী আরমা দত্ত এমপি, শহীদ পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান আহমদের পুত্র কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, শহীদ অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার কন্যা ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর পুত্র নাট্যজন আসিফ মুনীর, শহীদ অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর পুত্র মানবাধিকার নেতা তানভীর হায়দার চৌধুরী, শহীদ সাহিত্যিক শহীদুল্লা কায়সারের কন্যা অভিনয়শিল্পী শমী কায়সার, শহীদ ডা. আলিম চৌধুরীর কন্যা অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী, শহীদ সুরস্রষ্টা আলতাফ মাহমুদের কন্যা কলাম লেখক শাওন মাহমুদ।