অর্থ পাচারকারীদের তথ্য যাতে প্রকাশ্যে না আসে, সেজন্যই বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘গতকাল(শনিবার) ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন যে, ‘সাংবাদিকরা বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকবে কেন?’ বাংলাদেশ ব্যাংক কি নিষিদ্ধ পল্লি? বাংলাদেশ ব্যাংক কি একেবারে রেস্ট্রিক্টেড ক্যান্টনমেন্ট? ক্যান্টনমেন্টেও তো যদি বৈধ মানুষ যেতে চায়, তাদের তো কোনো অসুবিধা হয় না। ব্যাংকে সাংবাদিক ঢুকবে না, তাহলে কি মাফিয়া, মাস্তান, ঋণ খেললাপিরা ঢুকবে? আর বাংলাদেশ ব্যাংক তো জনগণের আমানত রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান। এটা তো সব সময় অ্যাকাউন্টেবিলিটির মধ্যে থাকবে, এখানে সাংবাদিকরা তো যেতে পারে।’
রোববার ( ১৯ মে) দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন রিজভী।
আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব ভবনের নিচতলায় অভ্যর্থনা বিভাগে রাখা রেজিস্ট্রার বইয়ে পরিচয় লিখে সই করে বিশেষ ‘পাস’ নিয়ে ভেতরে যেতে পারতেন সংবাদকর্মীরা। তবে গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে এই পাস ইস্যু করা বন্ধ রয়েছে গভর্নরের নির্দেশে। সাংবাদিকরা কোন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলছেন সেটিও নজরদারি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সাংবাদিকদের। চার ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক, পরিচালকসহ সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অলিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলতে।
রিজভী বলেন, সাংবাদিকরা তো দুবাইয়ে বাড়ি করেনি, সাংবাদিকরা কেউ মালয়েশিয়া-কানাডায় বাড়ি করেনি। ওবায়দুল সাহেব আপনি এসব কী কথা বলছেন? আপনাদের যে মাফিয়ারা দেশের জনগণের পকেট কেটে যে টাকাগুলো নিয়ে আজকে অর্থবিত্তের মালিক হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বিত্তবিলাসে মগ্ন রয়েছে, তাদের কথা যাতে দেশবাসী অথবা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জানতে না পারে, সেজন্য সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
এর আগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর কয়েকদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল। তখন প্রতিবাদের মুখে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দেশের অর্থনীতির চালচিত্র তুলে ধরতে গিয়ে রিজভী বলেন, প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার উধাও করে দেওয়া হয়েছে, এখন তলানির দিকে আসছে। বৈদেশিক রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলার আছে সরকারের হাতে। যারা সচেতন জনগণ, বিজ্ঞ মানুষ- তারা বলছেন, ‘তা নয়, আসলে ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার রয়েছে’। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতের পাওনা পরিশোধ করতে ৪ বিলিয়ন ডলার চলে যাবে, ডলার তো তলানিতেই।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমরা একটা শূন্য গহ্বরের ভেতরে যেন বসবাস করছি, আমাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। কীসের উপর দাঁড়িয়ে আছি তা নিজেরাই বলতে পারব না। শুধু ব্যাংক থেকেই ১২ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। এটা আমার বক্তব্য না, এটা সিডিপির বক্তব্য। লোপাটকারীরা সবাই ক্ষমতা ঘনিষ্ঠ মানুষ।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপের ভোট প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, এই ভোট বর্জনের জন্য আমাদের নেতাকর্মীরা জনগণের কাছে যাচ্ছেন, আহ্বান জানাচ্ছেন, লিফলেট বিতরণ করছেন। বর্জনের যে প্রস্তুতি, সেটা সমান তালে চলছে। আমাদের নেতা তারেক রহমান এই ভোট বর্জনের যে আহ্বান জানিয়েছেন, সেটাও ব্যাপকভাবে সাড়া পেয়েছে। মানুষ মনে করে এই ডামি সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া মানে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যাওয়া, সত্য ও ন্যায়ের বিরুদ্ধে যাওয়া।”
রিজভী বলেন, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে, প্রথম ধাপের যে নির্বাচন- সেই নির্বাচনে আমাদের আহ্বানে যেমন জনগণ সাড়া দিয়েছে এবং ভোট বর্জন যেমন সফল হয়েছে; দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনেও (বর্জন) সফল হবে। এই দুর্বিনীত পীড়িত আওয়ামী লীগ সরকারকে মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে। এর প্রতিফলন ইতিমধ্যে হয়েছে, আবারো হবে।