প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। কমিশনের একজন যুগ্ম সচিবকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার ( ৯ জুলাই) কমিশনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রশ্নফাঁস নিয়ে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তার ব্যাখ্যা আমরা দিয়েছি। তারপরও পুরো ঘটনাটি আরও অধিকতর তদন্ত করতে একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সবগুলো পক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। কমিশনের যুগ্ম সচিব ড. আব্দুল আলীম খানকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুইজন সদস্য হলেন, কমিশনের পরিচালক দিলাওয়েজ দুরদানা ও মোহাম্মদ আজিজুল হক।
পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি এবং তৈরিকৃত ছয় সেট প্রশ্ন থেকে কীভাবে একটি সেট চূড়ান্ত করা হয় তার বর্ণনা দিয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেছেন, আমি এটা বলতে চাই না। কারণ, এটা এককভাবে কেউ করে না, অনেক জনের সমন্বয়ে করে। কিন্তু প্রশ্নফাঁস করা ভীষণ কঠিন। প্রশ্নফাঁস করলে ছয় সেট ফাঁস করতে হবে। ছয় সেট মানে এক হাজার ২০০ প্রশ্ন। লটারিতে ছয় সেট থেকে কোনো একটা সেট আসে। কোনটা আসবে, সেটা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বলতে পারবে না।
পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, সব সেট প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, সেটাও আমি বলতে পারব না। আবার সব প্রশ্নফাঁস হয়নি, সেটাও আমি বলতে পারব না। তদন্তের আগে কিছুই বলা সম্ভব না। যদি প্রশ্ন ফাঁস হয়েও থাকে, তাহলে আমরা কাউকে ছাড়ব না। এমনকি আমারও যদি কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকে, তাহলে আমিও শাস্তির বাইরে যাব না।
তিনি বলেন, গত ১২ বছরে বহু পরীক্ষা হয়েছে। যখনই কোনো পরীক্ষা হয় তখন সেখানে কোনো অনিয়ম হলে আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে হোক বা পরীক্ষার্থীদের মাধ্যমে হোক, বা বিভিন্নভাবে (অভিযোগ) আসে। ১২ বছর আগের পরীক্ষা নিয়ে এতদিন পরে প্রমাণ কীভাবে হবে? পিএসসির এখতিয়ারভুক্ত বিষয়ে কোনো অপরাধ যদি প্রমাণিত হয় তাহলে আইনে যা ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে, তার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা পিএসসি নেবে।
১২ বছর আগের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত কমিটি কাজ করবে জানিয়ে মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, পরিপূর্ণ বিষয়টিই আমাদের তদন্তের মধ্যে আছে। আমাদের তদন্তের প্রতিবেদনে পরিপূর্ণ বিষয়টি আনা হচ্ছে হুবহু কোট-আনকোট করে।
পিএসসির সাবেক গাড়িচালকের প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয় প্রকাশ্যে আসায় পিএসসি বিব্রত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেকোনো ঘটনা, সেটা যদি পিএসসিকেন্দ্রিক হয়, তাহলে সেটা আমাদের জন্য কষ্টদায়ক।
বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে পিএসসির দুজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডি জানিয়েছে, পিএসসির উপপরিচালক মো. আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, কর্মচারী (ডেসপাস রাইডার) মো. খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম এবং সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী ও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান, সাবেক সেনাসদস্য নোমান সিদ্দিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও মিরপুরের ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মো. মামুনুর রশিদ, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী মো. শাহাদত হোসেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেকনিশিয়ান নিয়ামুন হাসান, ব্যবসায়ী সহোদর মো. সাখাওয়াত হোসেন ও সাইম হোসেন, ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম এবং যুবক লিটন সরকার গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন।ৎ
গ্রেফতার ব্যক্তিরা ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত ছিলেন। তারা একাধিক নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসেও জড়িত বলে জানা গেছে। তাদের সিআইডি কার্যালয়ে এখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।