সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সিপিডির বাজেট প্রস্তাবনা

 

সিপিডির বাজেট প্রস্তাবনা

আগামী বাজেট হতে হবে

করোনা সামাল দেবার

–স্বাস্থ্যসহ চারটি খাতকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত

–অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ আর রাখা ঠিক হবে না

–দরিদ্রদের যে নগদ সহায়তা দিচ্ছে, সেটি আরও বাড়ানো উচিত

–শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে

–রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা যেন বাস্তবসম্মত হয়

–ধনীদের কর বাড়িয়ে ইন্টারনেটে কমানোর সুপারিশ

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। মহামারি করোনার ভয়াবহ প্রকোপ থাকায় আগামী বাজেটে স্বাস্থ্যখাতসহ মোট চারটি খাতকে বেশি গুরুত্ব দেবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সিপিডি বলেছে, আগামী বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়লো না কমলো সেদিকে নজর না দিয়ে, কিভাবে করোনা সামাল দেওয়া যায় সেদিকে বেশি নজর দেওয়া দরকার।

সিডিপির বাজেট প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত গরিব মানুষদের জন্য সরকার যে নগদ সহায়তা দিচ্ছে আগামী বাজেটে এটি আরো বাড়াতে হবে। আগামী বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা সাদার করার সুযোগ আর রাখা ঠিক হবে না। তাছাড়া ধনীদের কর বাড়িয়ে ইন্টারনেটের ওপর কর কমানোরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সিপিডির বাজেট প্রস্তাবনায়। একই সঙ্গে আগামী অর্থ বছর রাজস্ব আদায় অনেক চ্যালেঞ্জের হবে, এ জন্য বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষমাত্রা যেন বাস্তবসম্মত দেওয়া হয়। সিপিডি আরো উল্লেখ করেছে, কারোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাতে বড় ধরণের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির পক্ষ থেকে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডি বলেছে, সরকার ৩৫ লাখ পরিবারকে যে পরিমাণ নগদ সহায়তা দিচ্ছে, সেটি আরও বাড়ানো উচিত। একই সঙ্গে পরিবারের সংখ্যা ও নগদ সহায়তার পরিধিও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।

বছর শেষে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কত হবে, মহামারির মধ্যে এটি আলোচনার সময় নয়। এখন সময় হচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দেওয়ার। এখন বড় প্রকল্পে নজর দেওয়ার সময় নয়। এখন নজর দেওয়া উচিত কর্মসংস্থানের ওপর। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরার সময় এসব কথা বলেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

আগামী বাজেট কেমন হওয়া উচিত, সেটির ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। আর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

মূল প্রবন্ধে তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ আর রাখা ঠিক হবে না। আগামী অর্থবছর থেকে এই সুবিধা বাতিলের প্রস্তাব করছি। কারণ, এই সুবিধা করকাঠামোর সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।’ বরং যাঁরা কর শনাক্তকরণ নম্বর নিয়েছেন, তাঁদের করের আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে চারটি খাতের ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সেগুলো হলো কোভিড মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে সেবা নিশ্চিত করা। সে জন্য এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানো। দ্বিতীয়ত, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো। তৃতীয়ত, কর্মসংস্থান তৈরিতে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো। চতুর্থত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, রপ্তানিমুখী শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ।

সভায় মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার গরিব মানুষকে নতুন করে নগদ সহায়তা দিতে যাচ্ছে। সত্যিকারের গরিব মানুষ যাতে এ সহায়তা পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, প্রণোদনার চেয়ে নগদ সহায়তা বেশি উপকারী। এ টাকায় চাহিদা তৈরি হয়। অর্থনীতি চাঙা হয়। তাই নগদ সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো উচিত। একই সঙ্গে গরিব মানুষের সংখ্যা এবং এর পরিধিও বাড়ানো উচিত। বছরে দুই থেকে তিনবার গরিব মানুষকে নগদ সহায়তার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

সভায় ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমাদের এখানে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বেশি দেখানোর একটা প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এই জিডিপি যদি কর্মসংস্থান তৈরি করতে না পারে, রাজস্ব আদায় বাড়াতে না পারে, তাহলে এই প্রবৃদ্ধির কোনো অর্থই হয় না। পৃথিবীর অনেকে দেশেই প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়েছে। তাতে কী হয়েছে ওই দেশের। তাই জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় এখন নয়।’

আগামী অর্থবছরের বাজেটে সর্বোচ্চ করহার আগের জায়গায়,অর্থাৎ ৩০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করেছে সিপিডি, যেটা এখন ২৫ শতাংশ রয়েছে। এ ছাড়া আগামী অর্থবছরের বাজেট সম্প্রসারণমূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সিপিডি বলেছে, করোনার কারণে অর্থনীতির যে পরিবেশ, তাতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা যেন বাস্তবসম্মত হয়। স্বাস্থ্যসেবাসংক্রান্ত যেসব সরঞ্জাম রয়েছে, সেসব আমদানিতে কর পরিহারের পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।

করোনার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষা কার্যক্রমে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে। মহামারির কথা বিবেচনা করে ইন্টারনেট সেবায় সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ এবং সারচার্জ ১ শতাংশ প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। কোভিডের কারণে সংস্কার কার্যক্রম যাতে পিছিয়ে না যায়, সেদিকে নজর দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে বাজেট প্রস্তাবে। স্বাস্থ্য খাতে যাঁরা ফ্রন্টলাইনে আছেন, তাঁরা এখনো প্রণোদনার টাকা পাননি। তাঁদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য যত দ্রুত সম্ভব প্রণোদনার টাকা ছাড়ের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে করোনা মোকাবিলায় সরকারকে স্বাস্থ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে প্রাধান্য দিয়ে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) জিডিপি’র দুই থেকে তিন শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে এবং চার থেকে ছয় শতাংশ সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়ার সুপারিশ করে সংস্থাটি।

সিপিডির ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘করোনার কারণে দেশের দরিদ্রের হার যেমন বড়েছে, তেমন সরকারেরও বিভিন্ন উৎস থেকে কর আদায় আশানুরূপ হয়নি। ফলে সরকারকে উচ্চবিত্তদের কাছ থেকে বেশি পরিমাণে কর আদায় করে দরিদ্রদের মধ্যের নগদ সহায়তা হিসেবে দিতে হবে। এ সহায়তা এককালীন না হয়ে বছরে অন্তত দুই থেকে চারবার করে দীর্ঘ সময় ধরে দিতে হবে। কারণ করেনার সার্বিক পরিস্থিতি থেকে মনে হচ্ছে তা আরও কয়েক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।’

সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সরকার করোনায় সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের জন্য যে প্রণোদনা বরাদ্দ দিয়েছিল তা এখনো সব জায়গায় বণ্টন করা হয়নি। একইভাবে ডাক্তার ও নার্সের সংখ্যাও আগের অবস্থানেই রয়ে গেছে। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে বাজারে এ খাতে বরাদ্দ আগের বছরের চেয়ে বাড়ানো প্রয়োজন।’

###

সম্পর্কিত পোস্ট