মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

আওয়ামী লীগ সবসময় ভোটে ক্ষমতায় এসেছে: প্রধানমন্ত্রী

  • বিশেষ প্রতিনিধি

আওয়ামী লীগ সবসময় ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল। পেছনের দরজা দিয়ে আওয়ামী লীগ কখনও ক্ষমতায় আসেনি।

শনিবার (৭ মে ২০২২) গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিকাল সাড়ে পাঁচটায় এ বৈঠক শুরু হয়। করোনা টেস্টে নেগেটিভ রিপোর্ট আসা দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা এতে অংশ নিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান নির্বাচনে প্রহসন ও ভোট কারচুপির কালচার শুরু করেছিলো। আওয়ামী লীগ কখনো ভোটে পেছনে ছিল না। নানান ষড়যন্ত্র করে ভোটে পিছিয়ে রাখা হয়েছে।

নানা ষড়যন্ত্রের মধ্যেও আমরা এগিয়েছি। জিয়া, এরশাদ, খালেদা, তারেক সবাই মানুষ হত্যা করেছে। জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। তাদের সময় ক্ষমতা ছিল ক্যান্টনমেন্টে। পাকিস্তানি স্টাইলে মিলিটারি ডিকটেটরশিপ চালু করেছিল।

বিএনপির নেতৃত্ব কোথায় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দুজনই (খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান) সাজাপ্রাপ্ত। এদের সঙ্গে ডান, বাম, অতিবাম এসে যুক্ত হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের অপরাধ কি জানতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি গোষ্ঠী আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে চায়। আমাদের অপরাধটা কী? কোথায় ব্যর্থ হয়েছি? অনেকে অতিজ্ঞানী হলেও তারা কম বোঝে, তাকিয়ে থাকে কখন তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে। তারা বসে থাকে, কখন সিগন্যাল আসবে। বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করে, বিদেশ থেকে যেন তাদের ক্ষমতায় বসাবে।

সংগঠনকে শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের কুকর্ম মানুষকে মনে করিয়ে দিতে হবে। আওয়ামী লীগ নিয়মিত সম্মেলন করে। আমরা নিয়মিত সম্মেলন করি, সময় কাছে এসেছে, এর আগে কিছু কাজ আমরা করি। ঘোষণাপত্রের অনেক কিছু বাস্তবায়ন করেছি। আওয়ামী লীগ কোন মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে তৈরি সংগঠন নয়।

পঁচাত্তর পরবর্তী ঘটনার বর্ণনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী আওয়ামী লীগকে আমি দেখেছি। শত্রুরা কখনো ক্ষতি করতে পারে না। যদি ঘরের শত্রু বিভীষণ না হয়। আওয়ামী লীগের মধ্যে সব সময় এটি দেখা গেছে। আর এটি হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়। অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে এর মধ্যে আমরা এগিয়ে গেছি। সংগঠনকে সুসংঘটিত করা এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতায় গেলে দেশের জন্য আমরা কি করব, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে আমরা কাজ করেছি।

বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়ার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছিল। আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রকৃতপক্ষে সেভাবে আমাদের এখানে দাম বাড়েনি। আর জিনিসপত্রের দাম সারাবিশ্বে বেড়েছে। বিভিন্ন দেশের হিসাব নিলে দেখা যাবে কোথাও ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি। ইউরোপের কোন কোন দেশে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি রয়েছে। ভোজ্য তেল পাওয়া যাচ্ছে না। লন্ডনে রেশনিং করে দেওয়া হয়েছে। এক লিটারের বেশি কেউ তেল কিনতে পারবে না। প্রত্যেকটা জিনিস সুনির্দিষ্ট পরিমাণ নিতে হবে। এর বেশি নিতে পারবে না। সারা বিশ্বে একই অবস্থা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী যে মন্দা দেখা দিচ্ছে, তা ব্যাপকভাবে বাড়তে পারে। তার প্রভাব আমাদের উপরে আসতে পারে। কাজেই আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের পরে আমাদের শিপিংয়ের ভাড়া এত বেড়ে গেছে যে যেসব দেশ থেকে আমরা পণ্য আমদানি করি। সেই আমদানির ওপর প্রভাব পড়ছে। ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধের পরে তার প্রভাব ইউরোপ-আমেরিকার উপর পড়েছে। উদ্যোগ নিলে ভোজ্যতেল দেশে উৎপাদন করা সম্ভব হবে। ধানের তুষ দিয়ে তেল উৎপাদন হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হওয়ায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ এবার ঈদে নির্বিঘ্নে বাড়ি গেছে এবং ফিরছে। মানুষ গ্রামের বাড়ে গিয়ে ঈদ করেছে, উৎসব করেছে। ঈদে আমাদের দেশের মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যায়। বিশ্বে অনেক দেশে এমন রীতি কমে গেছে। তবে শহরের মানুষ গ্রামে গেলে গ্রামেও অর্থ সরবরাহ বাড়ে। গ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হচ্ছে। আমরা তৃণমূল থেকে উন্নয়ন করছি। গ্রামীণ অর্থনীতিও শক্তিশালী করছি। মানুষ গ্রামের বাড়িতে গিয়ে উৎসব করায় অর্থ সরবরাহ বাড়ে। পরাধীনদের অনুসরণ করব না। নিজস্বভাবে দেশের উন্নয়ন করব, মাথা উঁচু করে চলব।

টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, উন্নয়নের ধারা আরও অব্যাহত রাখতে হবে। জনগণকে ধন্যবাদ। তারা বারবার ভোট দিয়েছে, টানা ৩ বার ক্ষমতায় রেখেছে। অনেক উন্নয়ন হয়েছে, জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। আমরা চাই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক।

আগামী জুলাই মাসে আরও ৩৪ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর দেওয়া হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ঈদুল ফিতরের আগে প্রায় ৩৩ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর দেওয়া হয়েছে। জুলাই মাসে আরও ৩৪ হাজার দেব। বাকি থাকবে ৪৫ হাজার, তাও দিয়ে দিলে দেশে ভূমিহীন কেউ থাকবে না। আমরা চাই, বাংলাদেশে একটা মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

 

সম্পর্কিত পোস্ট