শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪

বিজয়ের ৫০:  অর্জন অনেক, যেতে হবে আরও বহুদুর

পিস বাংলা By পিস বাংলা ডিসে১৮,২০২১
  • মো. আনোয়ার হাবিব কাজল

বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ এই শব্দ তিনটি একইসূত্রে গাঁথা। প্রতিটি শব্দই একে অপরের পরিপূরক। একটিকে বাদ দিয়ে অপরটি কল্পনাও করা যায় না। আজ ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি। স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী।

আজ আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি তা আমাদের জন্য খুবই আনন্দের বিষয়। আর এই স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ছাড়া স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী কল্পনাও করা যায় না। স্বাধীনতা মানুষের গনতান্ত্রিক মৌলিক অধিকার।

ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দু’লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম হানির বিনিময়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের বিচক্ষণ নেতৃত্বে আমরা আমাদের দীর্ঘদিনের কাংখিত এ স্বাধীনতা অর্জন করেছি।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাই এবং তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি।

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ৫০ বছর পূর্ন হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাঙালীর মহাকবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর সম্মিলনে এবার বিজয় উৎসবের রং ছিল আরো বর্ণিল। লাল- সবুজে একাকার হয় দেশ। মানুষ ভেসেছিল বাঁধ ভাঙা আনন্দের উচ্ছ! উল্লাস আর মুক্তির উম্মাদনায়।

নতুন প্রজন্মেসহ সর্বস্তরের মানুষকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে দেশী-বিদেশী অতিথিদের অংশগ্রহণে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শপথবাক্যে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বিশ্বের বুকে বাঙালী জাতি প্রতিষ্ঠা করেছে তার স্বতন্ত্র জাতিস্বত্তা।

আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিব বর্ষের বিজয় দিবসে দৃপ্ত কন্ঠে শপথ করছি যে শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। দেশকে ভালবাসব। দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করব।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে উন্নত সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তুলব। মহান সুষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন। এ শপথ হৃদয়ে ধারন, লালন ও পূর্ণ বাস্তবায়নই হোক আমাদের আগামীর পথচলার পাথেয়।

স্বাধীনতা লাভের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত ধ্বংসপ্ত থেকে বাংলাদেশকে তুলে আনতে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে নিরলস পরিশ্রম করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। ক্ষুধা, দুর্নীতি, দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক স্বনির্ভর এক উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলেন তিনি। প্রবর্তন করে ছিলেন ‘সবুজ বিপ্লব’কর্মসূচী।

১৯৭৫সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের মদদপুষ্ট কতিপয় উচ্চাভিলাষী, পথভ্রষ্ট সামরিক কর্মকর্তার নির্মম হত্যাযজ্ঞের মধ্যদিয়ে তাঁর সে অগ্রযাত্রা বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ পথ হারিয়ে এক অনিশ্চিত গন্তব্যে চলতে শুরু করে।

স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি রাজাকাররা আবার পূনর্র্বাসিত হয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয় এবং স্বৈরাচার ও সামরিক জান্তার কবলে পড়ে দীর্ঘ একুশ বছর বাংলাদেশ এক অনিশ্চিত গন্তব্যে নিমজ্জিত হয়।

৭৫’এর ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের ম্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনার জীবনে যে দুঃসহ বেদনা এনে দিয়েছে, সেই শোক তাঁকে শক্তিশালী ও দায়িত্বশীল করেছে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যেতে। সেই বেদনাকে সঙ্গী করে তিনি তাঁর পিতার অসমাপ্ত কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।

১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আবার তাঁর বাবার অসাপ্ত কাজ ”স্বপ্নের সোনার বাংলা” সমাপ্ত করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে প্রতিটি মুহূর্তে জীবনকে বাজী রেখে নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যান।

বাংলাদেশের ক্রমাগত উন্নয়ন ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নের পথে যে নেত্রী আমার প্রেরণা ও আমার আদর্শ সেই নেত্রী আজ বিশ্বে সমাদৃত, দক্ষিণ এশিয়ায় অতুলনীয়া, স্বপ্নের সোনার বাংলার সফল স্থপতি, সততা, আত্মমর্যাদায় বলীয়ান ও সাহসের মূর্ত প্রতীক।

মোটা দাগে বলতে গেলে এ নিয়ে মোট চারবার সরকার প্রধানের দায়িত্বে এলেন শেখ হাসিনা। এছাড়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম এবং ২০০১ সালের অষ্টম সংসদে অর্থ্যাৎ মোট তিন দফা বিরোধীদলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

গণতন্ত্র এবং দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায়ও অভাবনীয় সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন তিনি।

১৯৯৬-২০০১ সালে তাঁর হাত দিয়েই সম্পাদিত পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি তার সরকারের অন্যতম সাফল্য। তাঁর নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের টানা ১৮ বছরের শাসনে বাংলাদেশ বিশাল অগ্রগতি ও বিস্ময়কর উন্নতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিনত হয়েছে বাংলাদেশ। মোটাদাগে বলতে গেলে বঙ্গবন্ধু হত্যামামলার চূড়ান্ত নিস্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য শেষ করা, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃ প্রতিষ্ঠা।

ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিস্পত্তি ও সমুদ্রবক্ষে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বøু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উম্মোচন, বঙ্গবন্ধু -১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপনের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, সাবমেরিনযুগে বাংলাদেশের প্রবেশ।

আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্নফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলোকে চার লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মনাল স্থাপন।

খাদ্যে স্বয়সম্পূর্নতা অর্জণ, মাথাপিছু আয় ২৫৫৪ ডলারে উন্নীত করা, দেশের প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ ৮.২ শতাংশে উন্নীত করণ, দারিদ্যের হার কমিয়ে ২০ ভাগে নামিয়ে আনা, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাওয়া, ৯৪ভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা।

যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, স্বাক্ষরতার হার ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিন প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত সবশিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদ্রসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারী নীতি প্রণয়ন।

ডিজিটার বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ফোর-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালু, স্বল্পোন্নত দেশে থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নয়নসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জণ করেছে বাংলাদেশ। এবছরের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ও মধ্যম আয়ের আধূনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পূরণে নিবেদিত তাঁর সরকার।

এই অঞ্চলে গণতন্ত্র, শান্তি ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী শিক্ষার বিস্তার, শিশু মৃত্যুর হার হৃাস ও দারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রামে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেশি-বিদেশি বেশ কিছু পুরস্কারও সম্মানে ভ’ষিত হয়েছেন জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতিসংঘের এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে ব্রিটিশ মিডিয়া চ্যানেল ফোর তাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফোবর্স ‘লেডি অব ঢাকা’ উপাধিতে ভূষিত করেছে।

দাতব্য সংগঠন গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশনের’পরিচালনা পর্ষদ শেখ হাসিনাকে ‘স্পেশাল রিকগনিশান ফর আউট স্ট্যান্ডিং লিডারশীপ অ্যাওয়ার্ড’দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ন পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দি আর্থ, ওর্য়াল্ড কংগ্রেস অব আইটি কর্তৃক উইটসা ইমিন্যান্ট পারসন অব দি ইয়ার-২০২১ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

দীর্ঘ এ ৫০ বছরের পথচলায় বাংলাদেশের অর্জনের তালিকা যথেস্ট লম্বা এতে কোন সন্দেহ নাই। বিশ্বের নামী-দামী দেশ ও দেশের নেতাদের দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের দিকে।

লেখক: মো. আনোয়ার হাবিব কাজল

সাংবাদিক

সদস্য, চাঁদপুর প্রেস ক্লাব

এবং

ঊর্ধ্বতন সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ)

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

 

 

সম্পর্কিত পোস্ট